NewsPolitics

বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে অমিত শাহের বাংলা সফর: বিজেপির কৌশল কী?

নিজস্ব প্রতিবেদক,মানুষের মতামত:২০২৬ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের এখনও এক বছর বাকি। তবে ভোটের প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি। কেন্দ্রীয় শাসক দল বিজেপিও রাজ্যে সংগঠনকে চাঙ্গা করতে সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে। সেই লক্ষ্যেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ফের বাংলায় সফরের পরিকল্পনা করছেন। সব ঠিক থাকলে মার্চের শেষ সপ্তাহে তিনি কলকাতায় আসতে পারেন।

বাংলায় বিজেপির প্রস্তুতি ও অমিত শাহের ভূমিকা

পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সংগঠনকে শক্তিশালী করতেই অমিত শাহ এবার সক্রিয়ভাবে রাজ্যে নজর দিচ্ছেন। দিল্লিতে তিনি সম্প্রতি বৈঠক করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে। এছাড়া, তিনি কথা বলেছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গেও।

সূত্রের খবর, অমিত শাহ শুধুমাত্র সংগঠনের তথ্য জেনে সন্তুষ্ট নন। তিনি নিজে বাংলার ভোট কৌশল ঠিক করতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে চান। তাই আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আরও একাধিকবার তিনি বাংলায় সফর করতে পারেন। এর মাধ্যমে বিজেপি একদিকে কর্মীদের উজ্জীবিত করতে চাইছে, অন্যদিকে নির্বাচনী ময়দানে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করতে চাইছে।

২০২১-এ আশাহত, ২০২৪-এ ধাক্কা

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে ৭৭টি আসন পেয়েছিল, যা দলের জন্য বড়সড় সাফল্য ছিল। কিন্তু ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার পরে যেভাবে একের পর এক বিজেপি বিধায়ক এবং নেতারা তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন, তাতে যথেষ্ট আশাহত হয়েছিল পদ্ম শিবির । সঙ্গে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ফল প্রত্যাশার তুলনায় কিছুটা হতাশাজনক হয়েছে । বিজেপি ২০১৯ সালের লোকসভায় রাজ্যে ১৮টি আসন পেলেও, ২০২৪ সালের ভোটে সেই সংখ্যা কমতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। তাই আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি ফের সংগঠনে গতি আনতে চায়।

বিজেপির লক্ষ্য কী?

১. সংগঠন মজবুত করা:

দলীয় কর্মীদের মনোবল বাড়ানো এবং বুথ স্তরে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করা।

২. তৃণমূল-বিরোধী প্রচার জোরদার করা:

তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, প্রশাসনিক ব্যর্থতা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তুলে প্রচার চালানো।

৩. নতুন ভোটারদের আকৃষ্ট করা:

বিশেষ করে যুবসমাজ, প্রথমবার ভোট দিতে যাওয়া নাগরিক এবং শহরাঞ্চলের ভোটারদের নিজেদের দিকে টানতে চায় বিজেপি।

৪. হিন্দুত্ব ও জাতীয়তাবাদী এজেন্ডা তুলে ধরা:

রাম মন্দির, সিএএ (নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন), সীমান্ত সুরক্ষা ইত্যাদি ইস্যুকে ব্যবহার করে বিজেপি ভোটের ময়দানে নিজেদের শক্তিশালী অবস্থানে রাখতে চায়।

তৃণমূলের পাল্টা কৌশল

অন্যদিকে, তৃণমূলও রাজ্যে নিজেদের সংগঠন ধরে রাখতে মরিয়া। দল ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জনসংযোগ কর্মসূচি শুরু করেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি জনতার সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছেন, পাশাপাশি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও যুব সমাজের মধ্যে জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে সক্রিয়। বিজেপির ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতির বিরুদ্ধে তৃণমূল “বাঙালি পরিচয়”, উন্নয়নমূলক কাজ ও কেন্দ্রের বঞ্চনার অভিযোগকে সামনে রেখে প্রচার চালাবে।

অমিত শাহের আসন্ন বাংলা সফর স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছে যে বিজেপি এবার বিধানসভা নির্বাচনের লড়াইকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। সংগঠন মজবুত করা থেকে শুরু করে নির্বাচনী ময়দানে কার্যকরী কৌশল তৈরির দায়িত্ব তিনি নিজেই নিচ্ছেন। তবে বিজেপি কি আদৌ তৃণমূলের সংগঠনের শক্তিকে টেক্কা দিতে পারবে? নাকি ২০২১-এর মতো শেষ মুহূর্তে রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে যাবে?তার উত্তর দেবে ২০২৬ সালের ভোটের ফলাফল।

Share with

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *