NewsPoliticsRecent News

আরএসএস-মুসলিম ধর্মীয় নেতাদের বৈঠক: সম্প্রদায়গত ঐক্যের বার্তা মোহন ভাগবতের

নিজস্ব প্রতিবেদক,মানুষের মতামত:সম্প্রদায়গত বিভাজনের অভিযোগের মাঝেই সাম্প্রতিক দিল্লিতে এক ব্যতিক্রমী বৈঠকে মিলিত হলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-এর প্রধান মোহন ভাগবত এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত প্রখ্যাত মুসলিম ধর্মীয় নেতা ও পণ্ডিতরা। নয়াদিল্লির হরিয়ানা ভবনে আয়োজিত প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার এই সভাটি ছিল অল ইন্ডিয়া ইমাম অর্গানাইজেশনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ পর্ব, যার মধ্য দিয়ে আরএসএস ও মুসলিম সমাজের মধ্যে বহুল আলোচিত মতবিনিময় ও বোঝাপড়ার প্রক্রিয়া আরও এগোল বলে মনে করা হচ্ছে।

এই বৈঠকের গুরুত্ব শুধু তাৎক্ষণিক প্রেক্ষিতে নয়, বরং এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটও যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। ২০২২ সালেই ইমাম উমর আহমেদ ইলিয়াসির আমন্ত্রণে মোহন ভাগবত একটি মাদ্রাসা পরিদর্শনে যান,যা ছিল আরএসএস এবং মুসলিম সমাজের মধ্যে প্রথম আনুষ্ঠানিক সেতুবন্ধনের সূচনা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার আরও বৃহৎ পরিসরে, দেওবন্দ ও বরেলি-সহ বিভিন্ন প্রথিতযশা মাদ্রাসা ও ইসলামী প্রতিষ্ঠান থেকে আগত উলেমা,ইমাম ও মুফতিরা এই আলোচনায় অংশ নেন।

বৈঠক সম্পর্কে ইমাম উমর আহমেদ ইলিয়াসি সংবাদমাধ্যমে বলেন, “এটি এমন এক সময়ে আয়োজিত, যখন আরএসএস তাদের শতবর্ষ এবং আমাদের সংগঠন অল ইন্ডিয়া ইমাম অর্গানাইজেশন ৫০ বছর পূর্তি পালন করছে। দুই পক্ষই অনুভব করছে, দেশের মঙ্গলের জন্য ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলির মধ্যে সংলাপ অত্যন্ত জরুরি।”

তিনি আরও জানান, বৈঠকে জাতীয় গুরুত্বের বিভিন্ন বিষয়, বিশেষ করে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধির উপায় নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়। সভায় একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে এই আলোচনা একটি স্থায়ী রূপ পাবে এবং গ্রাসরুট স্তরেও এই আলাপ-আলোচনার পরিসর তৈরি করা হবে।

বিশেষত এই বৈঠকে একটি নতুন ধারণারও জন্ম হয় — মন্দিরের পুরোহিতদের সঙ্গে মসজিদের ইমামদের, গুরুকুলের সঙ্গে মাদ্রাসার শিক্ষকদের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন। ইলিয়াসির কথায়, “মানুষ ধর্মীয় নেতাদের কথা গুরুত্ব দিয়ে শোনেন। তাই এই ধর্মীয় নেতারাই যদি পরস্পরের সঙ্গে কথা বলেন, একে অপরকে বোঝার চেষ্টা করেন, তাহলে সমাজে সেই বার্তা খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে।” তিনি আরও বলেন, “এই প্রচেষ্টা সম্পূর্ণভাবে দেশের স্বার্থে এবং সামাজিক ঐক্য গঠনের দিকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।”

যদিও আরএসএসের অতীত এবং তার বিরুদ্ধে বহুবার মুসলিম বিরোধিতার অভিযোগ উঠেছে, মোহন ভাগবতের এই ধরনের আলোচনায় অংশগ্রহণ অনেককেই চমকে দিয়েছে। এর ফলে যারা আরএসএসকে চিরকাল মুসলিম বিরোধী বলে অভিহিত করতেন, তাদের জন্য এক ধরনের রাজনৈতিক ও আদর্শিক চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে বলেই রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা।

তবে এই বৈঠকের তাৎপর্য শুধু রাজনৈতিক নয়, সামাজিক স্তরেও এর বড় প্রভাব রয়েছে। ভারতে সাম্প্রদায়িক বিভেদ এবং ধর্মীয় মেরুকরণের আবহে এই ধরনের আলোচনা এক আশার আলো দেখায়—যেখানে ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে মিলেমিশে একসাথে থাকার সংকল্পকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। আরএসএস এবং মুসলিম ধর্মীয় নেতৃত্বের এই বৈঠক যদি শুধু প্রতীকী না থেকে বাস্তব পর্যায়ে প্রয়োগ করা যায়, তাহলে তা নিঃসন্দেহে ভবিষ্যতে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার মজবুত ভিত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে।

এই বৈঠক তাই শুধু একটি সভা নয়, বরং একটি বার্তা—যেখানে ধর্মের ব্যবধানকে নয়, সংলাপ ও সহাবস্থানকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

Share with

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *