বিধানসভায় হিন্দুত্ব বিতর্ক তুঙ্গে,শুভেন্দুর আক্রমণে পাল্টা সুর চড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক,মানুষের মতামত:পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় হিন্দুত্ব বিতর্ক তীব্র হয়ে উঠেছে। সোমবার বিজেপি বিধায়করা বিধানসভা থেকে ওয়াক আউট করার পর মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় দাঁড়িয়ে সরাসরি আক্রমণ শানালেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে। তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন,তৃণমূল সরকার কোনোভাবেই হিন্দু-বিরোধী নয়,বরং রাজ্যে সর্বধর্মের সহাবস্থানই তাঁদের প্রধান লক্ষ্য। সোমবার বিধানসভায় সরস্বতী পুজো নিয়ে বিজেপির মুলতবি প্রস্তাব খারিজ হওয়ার পর বিজেপি বিধায়করা প্রতিবাদ জানিয়ে ওয়াক আউট করেন।এরপরই বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী মুখ্যমন্ত্রীকে ‘হিন্দু-বিরোধী’ বলে আক্রমণ করেন। সেই অভিযোগের জবাব দিতে গিয়েই মঙ্গলবার বিধানসভায় সরব হন মুখ্যমন্ত্রী।
বিজেপির প্রতিবাদ এবং বিধায়কদের সাসপেনশন
সোমবার বিজেপি বিধায়করা সরস্বতী পুজো নিয়ে বিধানসভায় আলোচনার অনুমতি চেয়েছিলেন। তাঁদের অভিযোগ,রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সরস্বতী পুজো করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু স্পিকার সেই আলোচনার অনুমতি দেননি। এর প্রতিবাদে বিজেপি বিধায়করা বিধানসভা থেকে ওয়াক আউট করেন। এই ঘটনার পর বিজেপি বিধায়কদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বিধানসভার মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষের সুপারিশে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সহ চার বিজেপি বিধায়ককে ৩০ দিনের জন্য সাসপেন্ড করেন স্পিকার। বিজেপির অভিযোগ, এই সিদ্ধান্ত রাজ্যের গণতন্ত্রকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।
সাসপেনশনের প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিধানসভার গাড়ি বারান্দায় বিক্ষোভ দেখান বিজেপি বিধায়করা। তাঁরা সেখানে স্লোগান তোলেন এবং মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমণ শানান। প্রতিবাদী বক্তৃতার পাশাপাশি বিজেপি বিধায়ক ও কবিয়াল অসীম সরকার মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে গান বাঁধেন। তাঁর গানেই উঠে আসে অভিযোগের সুর— মুখ্যমন্ত্রী নাকি হিন্দুদের ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্ব করছেন।
পাল্টা জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী
বিজেপির এই অভিযোগের কড়া জবাব দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমরা সব ধর্মকে সম্মান করি।আমাদের রাজ্যে দুর্গাপুজো,কালীপুজো, সরস্বতী পুজো সবই হয় আর তা ধুমধাম করেই হয়। বিজেপি শুধু মিথ্যা প্রচার করছে,দাঙ্গা বাঁধানোর চেষ্টা করছে। বাংলার সংস্কৃতি ও সহিষ্ণুতা নষ্ট করতে চাইছে বিজেপি।”
তিনি আরও বলেন, “আমি নিজে সরস্বতী পুজো করি, প্রতি বছর মা সরস্বতীর আরাধনা করি।বিজেপি আমাকে হিন্দু-বিরোধী বলছে! এরা কি একবারও দেখে না,আমি কী করি? এরা আসলে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছে।”
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পর তৃণমূল বিধায়করাও বিজেপিকে একহাত নেন। বিধানসভায় তৃণমূলের তরফে দাবি করা হয়, বিজেপি বারবার ধর্মীয় বিষয় নিয়ে রাজনীতি করছে এবং এটি বাংলার সংস্কৃতির পরিপন্থী।
রাজনৈতিক তরজা আরও চড়ছে
এই হিন্দুত্ব বিতর্কের ফলে রাজ্যের রাজনীতি আরও সরগরম হয়ে উঠেছে। তৃণমূল দাবি করছে, বিজেপি সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই বিতর্ক সৃষ্টি করছে, যাতে রাজনৈতিক মেরুকরণ করা যায়। অন্যদিকে,বিজেপির দাবি,পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুদের ধর্মাচরণে বাধা দেওয়া হচ্ছে এবং সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের দমন করার চেষ্টা করছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে,লোকসভা ভোটের আগে হিন্দুত্বের ইস্যুতে বিজেপি রাজ্যে বড়সড় প্রচার চালাতে চাইছে। এই বিতর্ক যে আগামী দিনে আরও তীব্র হবে, তা বলাই বাহুল্য। তবে তৃণমূলও তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে— বাংলায় সকল ধর্মের মানুষ মিলেমিশে থাকবেন, কোনো বিভেদ তৈরি করতে দেওয়া হবে না।
এই ঘটনাপ্রবাহে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। বিধানসভায় আবারও এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনার দাবি তুলতে পারে বিজেপি, আর তৃণমূল পাল্টা কৌশল নিতে পারে। সব মিলিয়ে, হিন্দুত্ব বিতর্কে রাজ্য রাজনীতির পারদ যে চড়তে থাকবে, তা স্পষ্ট।