কলকাতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একাধিক পরিষেবার বিষয় নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে ক্রমেই বাড়ছে ক্ষোভ
নিজস্ব প্রতিবেদক,মানুষের মতামত:নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বহু যাত্রীর কাছেই কলকাতার প্রবেশদ্বার এবং শহরের প্রথম পরিচয়। কিন্তু নিয়মিত বিমানযাত্রীদের মতে,সেই প্রথম পরিচয়ের আনন্দ বেশিক্ষণ টিকে থাকে না। বিমানবন্দরে পা রাখার পরই শুরু হয় নানা সমস্যার মুখোমুখি হওয়া—লজিস্টিক ত্রুটি,লাগেজ বিলম্ব, অগোছালো পরিষেবা,পুরনো সাজসজ্জা অপরিচ্ছন্ন টয়লেট—সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক মানের পরিষেবার স্বপ্ন অনেকটাই ফিকে হয়ে যায়।
মুম্বই-ভিত্তিক টেলিভিশন মিউজিক ডিরেক্টর ও সুরকার কুনাল কুণ্ডুর অভিজ্ঞতা এই বাস্তবতাকেই সামনে নিয়ে আসে। সম্প্রতি কলকাতায় অবতরণের পর তিনি দেখেন, তাঁর লাগেজ নিখোঁজ। বিমানবন্দরের কর্মীরা প্রথমে জানান,তাঁর লাগেজ নাকি কলকাতায় আসেনি। কিন্তু মুম্বই বিমানবন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে নিশ্চিত হয় যে লাগেজ বোর্ড করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পরে সেটি পাওয়া যায়—একটি কনভেয়ার মেশিনের ভেতরে আটকে ছিল।
কুণালের অভিযোগ এখানেই শেষ নয়। তাঁর অভিজ্ঞতায়, কলকাতায় লাগেজ ডেলিভারির গতি অস্বাভাবিকভাবে ধীর। “মুম্বই বা বেঙ্গালুরুর মতো শহরে প্লেন থেকে নামার কয়েক মিনিটের মধ্যেই লাগেজ হাতে আসে। কলকাতায় আমাকে ৪০ মিনিট, কখনও আরও বেশি অপেক্ষা করতে হয়েছে,” বলেন তিনি।
তিনি আরও জানান, বিমানবন্দরে পর্যাপ্ত ও স্পষ্ট সাইনেজের অভাব রয়েছে, আর কর্মীদের অনেকে প্রাথমিক তথ্যও জানেন না। “আপনি যদি কাউকে জিজ্ঞাসা করেন এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কাউন্টার কোথায়, অনেকে ঠিক উত্তর দিতে পারেন না। টিয়ার-১ বিমানবন্দরে এটা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়,” ক্ষোভ প্রকাশ করেন কুণাল।
লাউঞ্জ পরিষেবার ক্ষেত্রেও তাঁর সমালোচনা তীব্র। পুরনো সাজসজ্জা, সীমিত মেনু এবং ধীর গতির পরিষেবা—সবই যাত্রীদের বিরক্তির কারণ। “সময় কম থাকা সত্ত্বেও যদি ঠান্ডা খাবারের জন্য ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়, তা একেবারেই মানা যায় না,” বলেন তিনি।
নিয়মিত যাত্রীদের মতে, এই বিমানবন্দরকে সত্যিকারের আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছে দিতে হলে কয়েকটি ক্ষেত্রে অবিলম্বে উন্নতি আনা জরুরি। এর মধ্যে রয়েছে লাগেজ ব্যবস্থাপনা দ্রুততর করা, কর্মীদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া, পর্যটকবান্ধব ও স্পষ্ট সাইনেজ স্থাপন, পরিষেবা মান উন্নত করা এবং টার্মিনালের রক্ষণাবেক্ষণ ও সাজসজ্জা আধুনিকীকরণ।
কলকাতা বিমানবন্দর শহরের জন্য শুধু একটি পরিবহন কেন্দ্র নয়, বরং বিদেশি ও দেশের অন্যান্য অংশ থেকে আগত যাত্রীদের কাছে ‘সিটি অফ জয়’-এর প্রথম প্রতিচ্ছবি। যাত্রীদের মতে, এই প্রথম ছাপ যদি হতাশাজনক হয়, তবে তা শুধু যাত্রীদের অভিজ্ঞতাকেই ক্ষুণ্ন করে না, বরং শহরের ভাবমূর্তির ওপরও প্রভাব ফেলে। তাই, বিমানবন্দরের পরিষেবা ও অবকাঠামো উন্নত করার পদক্ষেপ অবিলম্বে গ্রহণ করা প্রয়োজন, যাতে কলকাতা সত্যিই তার আন্তর্জাতিক স্বপ্নকে পূরণ করতে পারে।