সুকৌশলে বিজেপিকে রোখার সংকল্প মমতার
নিজস্ব প্রতিবেদক,মানুষের মতামত:সর্ব ধর্ম সমন্বয় ও বাংলার জাত্যাভিমানকে অস্ত্র করে ২৬-র বিধানসভা নির্বাচনে বাজিমাত করতে চাইছেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি-আরএস এসের হিন্দুত্বের অস্ত্র পশ্চিমবঙ্গের ৩১ শতাংশ মুসলিমকে মমতা নির্ভরতা বাড়িয়ে তুলেছে। মুসলিমরা নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিছনে দাঁড়াচ্ছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম ভোট ব্যাংকে যে সামান্যতম বিভাজনের সম্ভাবনা নেই তা ভালমতোই জানে রাজনৈতিক কারবারিরা।
মমতার কৌশল, ৩১ শতাংশ মুসলিম ভোটের পাশাপাশি হিন্দু দলিত, ওবিসি, উপজাতি ভোটের ১৯-২০ শতাংশ করায়ত্ব করা। তৃণমূল সুপ্রিমোর নিদান, ২৬-র ভোটে ৫০ শতাংশ জনসমর্থন নিশ্চিত করতে হবে। মমতার স্থির বিশ্বাস যে, হিন্দুত্ব অস্ত্র বিজেপির বুমেরাং হবে। মমতার লক্ষ্য, বিজেপিকে ৫০ আসনের মধ্যে বেঁধে রাখা। বাম-অতি বাম-কংগ্রেসের ভোট ব্যাংকে থাবা বসানোও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক লক্ষ্য।
তাই পশ্চিমবঙ্গে ২৬-র নির্বাচনে জয় নিয়ে প্রবল আত্মবিশ্বাসী মমতা নামছেন প্রচারে। ২১জুলাইয়ের শহিদ স্মরণের মঞ্চ থেকেই ২৬-র ভোট প্রচার শুরু করবেন মমতা। ২৬-এ কেরালা, অসম, তামিলনাড়ুর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গেও ২৯৪ আসনের বিধানসভা নির্বাচন হতে চলেছে। সম্ভবতঃ এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ, প্রায় এক মাস ব্যাপি এই নির্বাচন হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচন কমিশন কেরালা ও তামিলনাড়ুতে এক দফাতেই নির্বাচনের কর্মসূচী নিতে পারে। তবে অসমে অন্ততঃ ৩/৪ দফায়, আর পশ্চিমবঙ্গে ন্যুনতম সাত দফায় ভোট পর্ব শেষ করা হতে পারে বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহল। পশ্চিমবঙ্গে তাঁর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অসমে উপর্যুপরি তৃতীয়বার ক্ষমতায় ফেরার ব্যাপারে প্রবল আত্মবিশ্বাসী হলেও কেরালা, তামিলনাড়ুতে শুধু ভোট প্রাপ্তির হার ও আসন সংখ্যা বাড়ানোই যে তাদের লক্ষ্য তা আর গোপন করেননি। পশ্চিমবঙ্গে এখনও পর্য্যন্ত বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের জয়ের ব্যাপারে তেমন আত্মবিশ্বাস নেই। তবু পশ্চিমবঙ্গে মরণ কামড় দিতে যে গেরুয়া শিবির প্রস্তুতি শুরু করেছে তাঁর ইঙ্গিত মিলেছে বিজেপির চালিকাশক্তি আরএসএসের সাম্প্রতিক সক্রিয়তায়।
আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের ১১ দিন পশ্চিমবঙ্গ সফরের পরই আরএসএস ও তাদের শাখা সংগঠনগুলির নেতৃবৃন্দ এবং বিজেপির এ রাজ্যের শীর্ষ নেতারা উলুবেড়িয়ায় ২ দিনের সমন্বয় বৈঠক করবেন। পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুরা বিপন্ন, তাই সব হিন্দু এক হও এই স্লোগান ও ধর্মীয় বিভাজন-সাম্প্রদায়িক মেরুকরণেই আস্থা রেখে বিজেপি নির্বাচন যুদ্ধে নামতে চলেছে। বিজেপির চিন্তা বাড়ছে সিপিএম সহ বাম-অতি বাম শিবির ও কংগ্রেসের বিরোধী ভোট ভাগ করার কৌশলে।
পশ্চিমবঙ্গে অতীতের নির্বচনী সমীক্ষা মতো ২০২১-র বিধানসভা নির্বাচন, ২০২৩-র পঞ্চায়েত নির্বাচন, এমনকী অতি সম্প্রতি ২৪-র লোকসভা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মদত সত্ত্বেও তৃণমূলের কাছে বার বার হারতে হয়েছে বিজেপিকে। তাই ২৬-র বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলের অন্দরে এবার ‘নয় নেভার’ স্লোগান তুলে নির্বাচন যুদ্ধে নামতে চলেছে বিজেপি। পুরোপুরি মেশিনারী আরএসএসের হাতে।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মনে করেন যে, তৃণমূল কংগ্রেসের মুসলিম তোষণের রাজনীতি, বাংলাদেশি মুসলিম অনুপ্রবেশ, বাংলাদেশে হিন্দু ও স্বাধিনতাপন্থী
মুসলিম নিগ্রহ, রাজ্যে জনসংখ্যা চিত্রের দ্রুত পরিবর্তন, ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের নাম নিয়ে হিন্দুত্বের আবেগে ভোটে জিততে চাইছে বিজেপি। শুভেন্দুর ফর্মূলা ৩৯ শতাংশ ভোটারের সঙ্গে আরো ৪-৫ শতাংশ মানুষকে বিজেপির দিকে নিয়ে আসা। তাতেই কেল্লা ফতে হবে। অন্যদিকে মমতার কৌশল ৫০ শতাংশ জন সমর্থন নিশ্চিত করা।
পশ্চিমবঙ্গে ২৬-র বিধানসভা নির্বাচনেও গেরুয়া শিবিরকে গো-হারান হারাতে জোর প্রস্তুতি চলছে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে। মমতার টার্গেট ২১৫ আসন ছাপিয়ে যেতেই হবে। দলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের আগাম দাবি তৃণমূল এবার ২৫০ আসন জিতবে। ২০২১-এ বিজেপি ‘ইসবার ২০০ পার’ বলে ৭৭ আসনে আটকে যায়। মোদী, অমিত শাহ সহ দলের তাবড় নেতারা ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করেও গেরুয়া শিবিরের বিপর্যয়কে আটকাতে পারেন নি। এখন দেখার, বিজেপিকে রুখতে মমতা বন্দোপাধ্যায় আত্মবিশ্বাসের ওপরে ভর করে কতটা কৌশলী পদক্ষেপ নিতে পারেন।