রমজানের শুরুতেই অগ্নিমূল্য ফলমূল বিপাকে নিম্ন-মধ্যবিত্ত রোজদাররা
নিজস্ব প্রতিবেদক,মানুষের মতামত:পবিত্র রমজান মাস শুরু হতে না হতেই কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন বাজারে ফলের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। মার্চের শুরুতেই গ্রীষ্মের আভাস মিলছে,আর এই গরমে রোজাদাররা ইফতারের জন্য ফলাহারের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু বাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষজন সমস্যায় পড়েছেন,কারণ ফলের দাম এতটাই বেড়েছে যে তা অনেকের ক্রয়সীমার বাইরে চলে যাচ্ছে।
দাম বৃদ্ধির চিত্র
কলকাতা ও শহরতলির বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যাচ্ছে,প্রায় সব ধরনের ফলের দাম সাধারণ সময়ের তুলনায় অনেকটাই বেশি। যেমন—
• কলার ডজন প্রতি দাম ₹৮০-₹১২০
• আপেলের কেজি প্রতি দাম ₹২৮০-₹৩৫০
• আঙুরের কেজি প্রতি দাম ₹১৮০-₹২৪০
• পেঁপের দাম ₹৫০-₹৭০ প্রতি কেজি
• খেজুরের দাম কেজি প্রতি ₹৪০০-₹৬০০
রোজার মাসে খেজুর অন্যতম প্রধান ফল,কারণ রোজা ভাঙার সময় খেজুর খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। অথচ, এই মৌসুমে খেজুরের দাম অনেকটাই বেড়েছে,যা সাধারণ মানুষের জন্য সমস্যা তৈরি করেছে।
রাজ্য সরকারের নির্দেশ ও বাস্তব পরিস্থিতি
রমজান মাসে যাতে ফলের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকে,সে বিষয়ে আগে থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি রাজ্যের কৃষি বিপণন দফতরকে বলে দিয়েছিলেন, বাজার মনিটরিং করতে এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। কিন্তু বাস্তবে সেই নির্দেশ কার্যকর হয়নি বলেই অভিযোগ উঠছে।
ব্যবসায়ীদের একাংশ বলছেন, পাইকারি বাজারেই ফলের দাম বেশি, তাই খুচরো বাজারেও তার প্রভাব পড়ছে। অন্যদিকে,ক্রেতাদের অভিযোগ,বিক্রেতারা ইচ্ছাকৃতভাবে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন,কারণ রমজান মাসে ফলের চাহিদা অনেক বেশি থাকে।
কেন বাড়ছে ফলের দাম?
ফল ব্যবসায়ীদের মতে, কয়েকটি কারণে বাড়ছে দাম
১. চাহিদা বৃদ্ধি: রমজান মাসে সাধারণ সময়ের তুলনায় ফলের চাহিদা অনেকটাই বেড়ে যায়, ফলে দামও স্বাভাবিকভাবেই বাড়ে।
2. যোগান সংকট:কিছু কিছু ফলের উৎপাদন ও সরবরাহ কম হওয়ায় দাম বাড়ছে।
3. পরিবহন খরচ বৃদ্ধি: জ্বালানির দাম বাড়ায় দূরবর্তী রাজ্য থেকে ফল আনতে বেশি খরচ পড়ছে।
4. কৃত্রিম সংকট: অনেক অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছাকৃতভাবে ফল মজুত করে রাখছেন, যাতে বাজারে ঘাটতি তৈরি হয় এবং দাম বাড়ানো যায়।
রোজাদারদের অসুবিধা ও প্রতিক্রিয়া
দামের এই উর্ধ্বগতি নিম্ন ও মধ্যবিত্ত রোজাদারদের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফল খাওয়াটা রোজার মাসে শুধু ধর্মীয় কারণে নয়,বরং স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। সারাদিন উপবাস থাকার পর শরীরকে সচল রাখতে পুষ্টিকর খাবার দরকার,আর ফল তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু বাজারের এই পরিস্থিতিতে অনেকে চাহিদামতো ফল কিনতে পারছেন না।
একজন ক্রেতার ভাষায়, “রমজানে ফলের প্রয়োজন বেশি, কিন্তু বাজারে যা দাম তাতে সবকিছু কেনা সম্ভব হচ্ছে না। কলা, খেজুরের দাম এতটাই বেশি যে ইফতারের জন্য পরিমাণ মতো কেনা যাচ্ছে না।”
সমাধানের উপায়
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজ্য সরকারকে কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করতে হবে এবং পাইকারি ব্যবসায়ীদের উপর নজরদারি বাড়াতে হবে।
• বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে কৃষি বিপণন দফতরকে আরও সক্রিয় হতে হবে।
• অসাধু মজুতদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
• সরকার যদি প্রয়োজনে সহায়ক মূল্য দিয়ে কিছু ফল সরবরাহ করে, তাহলে দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
রমজান মাসে ফলের চাহিদা বাড়বে, তা প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু রাজ্য সরকার এবং প্রশাসন যদি আগেভাগে উদ্যোগ নিত,তাহলে হয়তো এই সংকট দেখা দিত না। এখন দেখার বিষয়,সরকার কবে সক্রিয় হয় এবং রোজাদারদের স্বস্তি দেয়ার জন্য কী পদক্ষেপ নেয়। আপাতত,মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির রোজাদারদের কপালে চিন্তার ভাঁজ থাকছেই।