প্রাণ হাতে করে যাতায়াত, ভগ্নদশায় কুলপির কাঠের সেতু!বিধায়কের স্বীকারোক্তি,প্রশাসনের নীরবতা
ইয়ামুদ্দিন সাহাজী,মানুষের মতামত:দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপি বিধানসভার গোপালনগর এলাকায় একটি কাঠের সেতুর ভগ্নদশা নিত্যদিন বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে হাজারো মানুষের জন্য।স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে থাকা এই সেতুটি এখন কার্যত ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।তবুও,প্রতিদিন প্রাণ হাতে নিয়েই ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে কর্মজীবী মানুষ এবং বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা পারাপার করছেন।
কুলপি ও কামারচক গ্রাম পঞ্চায়েতের সংযোগকারী এই কাঠের সেতুটি একসময় দুই এলাকার যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম ছিল। কিন্তু বর্তমানে এর অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে পাটাতন ভেঙে গেছে, কিছু কিছু জায়গায় কাঠের তক্তাগুলো প্রায় ঝুলে পড়েছে। সামান্য ভার পড়লেই দুলে ওঠে কাঠের পাটাতন, আর ভারসাম্য হারালেই সোজা পড়তে হবে খালের জলে। এভাবেই প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বাধ্য হয়ে ঝুঁকির মধ্যে চলাফেরা করছেন।
মূলত এই সেতুর ওপর নির্ভরশীল গোপালনগর, মশামারী,মল্লিকপাড়া, মন্ডলপাড়া,ঘোষপাড়া-সহ পাঁচ থেকে ছয়টি গ্রামের মানুষ।গাড়ি চলাচল একেবারেই বন্ধ হয়ে পড়েছে বহুদিন ধরে। ফলে স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যেও বড়সড় প্রভাব পড়েছে। বাজার থেকে পণ্য আনা-নেওয়া থেকে শুরু করে জরুরি পরিষেবা পর্যন্ত থমকে গেছে এই ভগ্ন সেতুর কারণে।
বিশেষ করে স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন এই জরাজীর্ণ কাঠের সেতুর উপর দিয়ে পার হতে হয় তাদের। একটু অসতর্ক হলেই ঘটে যেতে পারে বড় দুর্ঘটনা। এছাড়াও, সবচেয়ে বড় সমস্যায় পড়ছেন অসুস্থ মানুষ ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা। সেতুর ভগ্নদশার কারণে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছানো অসম্ভব হয়ে পড়ছে। ফলে রোগীদের অন্য রাস্তা ধরে পাঁচ-ছয় কিলোমিটার ঘুরে যেতে হচ্ছে, যা সময় ও শারীরিক কষ্ট— দুই-ই বাড়িয়ে তুলছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বহুবার পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে ব্লক প্রশাসন এবং দিদিকে বলো প্রকল্পেও অভিযোগ জানানো হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ভোট এলেই নেতারা প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান, সাময়িকভাবে কিছু মেরামতির উদ্যোগও নেন, কিন্তু কিছুদিন না যেতেই ফের আগের অবস্থায় ফিরে যায় সেতুটি।
এ বিষয়ে বিধায়ক স্বীকার করেছেন, সেতুটির অবস্থা অত্যন্ত বিপজ্জনক। তিনি বলেন, “সেতুটি সত্যিই বেহাল দশায় রয়েছে এবং যে কোনো মুহূর্তে বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। বিষয়টি আমি নিজেও একাধিকবার ইডিকেশন ও প্রশাসনকে জানিয়েছি, কিন্তু কেন এখনো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না, তা আমারও জানা নেই।”
এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। বিরোধী দলের নেতারা তীব্র কটাক্ষ করে বলেছেন, “শাসক দল কেবলমাত্র ভোটের সময় প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু কাজের বেলায় কোনো দায়িত্ব নেয় না। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার কথা তাদের মনে থাকে না। প্রশাসনের এই উদাসীনতার কারণেই এই সেতু আজও মৃত্যুফাঁদ হয়ে রয়ে গেছে।”
অন্যদিকে, তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্বের দাবি, “প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হয়েছে, দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে দুই পঞ্চায়েতের কিছু সমস্যা থাকায় কাজ শুরু করা যায়নি।”
কিন্তু প্রশ্ন একটাই— এই রাজনৈতিক দোষারোপের মধ্যে পড়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। প্রাণ হাতে নিয়ে নিত্যদিন যাতায়াত করতে হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রী, কর্মজীবী মানুষ থেকে শুরু করে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের। প্রশাসন কবে জাগবে, কবে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে, সেই দিকেই চেয়ে রয়েছে কুলপির সাধারণ মানুষ।