তৃণমূলের কৌশল নির্ধারণে বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোরে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক পাঁচ বছর পর ফিরছে পর্যবেক্ষক পদ?
নিজস্ব প্রতিবেদন,মানুষের মতামত:আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূল কংগ্রেসের মেগা বৈঠক নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চর্চা তুঙ্গে। এই বৈঠকে দলের সাংগঠনিক রদবদলের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে প্রায় পাঁচ বছর পর তৃণমূলের রাজ্যস্তরের সংগঠনে পর্যবেক্ষক পদ ফিরতে চলেছে বলে যে গুঞ্জন চলছে, তা আরও জোরালো হয়েছে। তৃণমূল সূত্রে খবর,দলের বিভিন্ন জেলায় অভিজ্ঞ এবং পুরোনো নেতাদের পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা হতে পারে,যা দলের পরবর্তী রণকৌশলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে।
২০২০ সালে পর্যবেক্ষক পদ তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত
২০২০ সালের ২৩ জুলাই, সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের এক ভার্চুয়াল বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পর্যবেক্ষক পদ তুলে দেওয়ার ঘোষণা করেছিলেন। তখন এই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানান বিশ্লেষণ চলেছিল।বিশেষজ্ঞদের মতে, শুভেন্দু অধিকারী সে সময় একসঙ্গে সাতটি জেলার পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর রাজনৈতিক শক্তি ক্রমশ বাড়ছিল,যা দলের অন্দরে অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠছিল। এরই মধ্যে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে দলের দূরত্ব বাড়তে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। অনেকেই মনে করেন, শুভেন্দুর প্রভাব কমানোর উদ্দেশ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পর্যবেক্ষক পদের অবলুপ্তি ঘটিয়েছিলেন।
পর্যবেক্ষক পদ কেন ফিরছে?
এবার পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে।শুভেন্দু অধিকারী এখন তৃণমূলের প্রতিদ্বন্দ্বী এবং বিজেপির অন্যতম প্রধান মুখ। অন্যদিকে,অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলের সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে কিছুটা সরেছেন। এই প্রেক্ষাপটে দলের অভিজ্ঞ নেতাদের আরও সক্রিয়ভাবে সংগঠনের দায়িত্বে ফেরানো হতে পারে!তৃণমূলের একটি সূত্র জানিয়েছে,বিভিন্ন জেলায় সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে এবং দলীয় সমন্বয় রক্ষা করতে পর্যবেক্ষক পদের গুরুত্ব অপরিসীম। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে দলের অভ্যন্তরীণ সংগঠন গঠনে নতুন ধরনের কাঠামো গড়ার চেষ্টা হলেও,তাতে মানাতে পারেননি অনেক শীর্ষ নেতা। ফলে পুরোনো,অভিজ্ঞ নেতাদের ফের জেলার দায়িত্বে ফিরিয়ে এনে সংগঠনকে শক্তিশালী করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে নতুন রণনীতি
২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূল কংগ্রেস এখন থেকেই সংগঠনকে মজবুত করতে চাইছে।দলের অভ্যন্তরীণ বিশ্লেষণে উঠে এসেছে যে, বিজেপি রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় সাংগঠনিক ভাবে শক্তিশালী হচ্ছে। বিশেষ করে জঙ্গলমহল, উত্তরবঙ্গ এবং নদিয়া-মেদিনীপুর অঞ্চলে বিজেপির প্রভাব বাড়ছে। এদিকে,বিভিন্ন জেলায় তৃণমূলের নিচুতলার সংগঠনে দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে!তাই, স্থানীয় স্তরে সংগঠনকে পুনর্গঠনের জন্য দক্ষ পর্যবেক্ষকদের ফেরানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
কোন কোন নেতা পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পেতে পারেন?
তৃণমূলের সাংগঠনিক রদবদলে পুরোনো এবং পরীক্ষিত নেতাদের গুরুত্ব বাড়তে পারে। সুব্রত বক্সি, ফিরহাদ হাকিম,অরূপ বিশ্বাস,শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়,মলয় ঘটক, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য,রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়,গৌতম দেব প্রমুখ নেতাদের নতুন করে বিভিন্ন জেলার দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ নেতারা পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পান কিনা,সেদিকেও নজর রয়েছে রাজনৈতিক মহলের।
দলের অন্দরেই মতভেদ?
তবে পর্যবেক্ষক পদ ফিরিয়ে আনার বিষয়ে দলের অন্দরেই কিছুটা মতভেদ রয়েছে। দলের অভিষেক ঘনিষ্ঠদ্র মতে, ২০২০ সালে পর্যবেক্ষক পদের বিলোপের পর দল আরও কেন্দ্রীভূতভাবে পরিচালিত হতে শুরু করে, যা নেতৃত্বকে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বেশি স্বাধীনতা দেয়। তবে তৃণমূলের প্রবীণ নেতাদের মতে, পর্যবেক্ষক পদের অবলুপ্তির পর সাংগঠনিক তৎপরতা কিছু ক্ষেত্রে কমে গিয়েছে,যার ফলে নিচু স্তরের সংগঠন দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাই এবার নতুন করে পর্যবেক্ষকদের নিয়োগ করলে দল আরও মজবুত হবে।
সিদ্ধান্ত ঘোষণা হতে পারে ২৭ ফেব্রুয়ারির বৈঠকে
২৭ ফেব্রুয়ারি নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংগঠনিক রদবদলের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে পারেন। এই বৈঠক থেকে শুধু পর্যবেক্ষক পদের পুনর্বহালই নয়, দলের সাংগঠনিক কাঠামোতেও কিছু পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যেতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিজেপি এবং অন্যান্য বিরোধীদের মোকাবিলা করতে হলে তৃণমূলকে আগেভাগেই শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। বিশেষ করে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ভালো ফল করলে, তা ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। তাই এখন থেকেই সংগঠনকে শক্তিশালী করা এবং নিচু স্তরের কর্মীদের আরও সক্রিয় করা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম লক্ষ্য হতে পারে। পর্যবেক্ষক পদ ফিরে এলে তা কীভাবে কাজ করবে এবং কারা এই দায়িত্ব পাবেন, তা দেখার জন্য এখন নজর থাকবে ২৭ ফেব্রুয়ারির বৈঠকের দিকে। সেই বৈঠকেই হয়তো তৃণমূলের আগামী দিনের রণকৌশল স্পষ্ট হয়ে যাবে।