NewsRecent News

ভোটার-আধার সংযুক্তিকরণের ফাঁক গলে ভুতুড়ে ভোটার উঠে পড়ার আশঙ্কা সংযুক্তিকরণ স্থগিতের দাবি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ তৃণমূল কংগ্রেস

জিৎ দত্ত,মানুষের মতামত:ভোটার পরিচয়পত্রের (এপিক) সঙ্গে আধার সংযুক্তিকরণ নিয়ে ফের উদ্বেগ প্রকাশ করল তৃণমূল কংগ্রেস। দলের আশঙ্কা, এই প্রক্রিয়ায় একাধিক ফাঁকফোকর থেকে যাচ্ছে, যার সুযোগ নিয়ে ভুতুড়ে ভোটার তালিকায় ঢুকে পড়তে পারেন। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের কাছে অবিলম্বে এই সংযুক্তিকরণ প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার দাবি জানাল তৃণমূল কংগ্রেস।

শুক্রবার সকালেই চার সদস্যের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধি দল কমিশনের দফতরে গিয়ে একটি বিশদ স্মারকলিপি জমা দেয়। প্রতিনিধি দলে ছিলেন রাজ্যসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন, এছাড়া ছিলেন লোকসভার সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার, লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের মুখ্য সচেতক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্যসভার সাংসদ সাগরিকা ঘোষ। এর আগে ১১ই মার্চ ১০ সদস্যের একটি তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিনিধি দল কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিল।

স্মারকলিপিতে তৃণমূল কংগ্রেস জানিয়েছে, “আমাদের পক্ষ থেকে কমিশনকে অনুরোধ জানানো হচ্ছে এই সংযুক্তিকরণ প্রক্রিয়াটি স্থগিত রাখতে, যতক্ষণ না এই বিষয়ে উত্থাপিত সব উদ্বেগ ও প্রশ্নের পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ সমাধান পাওয়া যায়।”

তৃণমূল কংগ্রেসের মূল আপত্তি, এপিক ও আধার সংযুক্তিকরণের যদিও স্বেচ্ছাসেবিত, তবুও সংশ্লিষ্ট ফর্ম নম্বর ৬বি-তে তা স্পষ্ট করে বলা হচ্ছে না। সেখানে এমন কোনও বিকল্প রাখা হয়নি, যাতে ভোটার জানাতে পারেন যে তিনি আধার নম্বর দিতে ইচ্ছুক নন। অথচ কমিশন ২০২৩ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছিল, আধার দেওয়া কোনও বাধ্যবাধকতা নয়। কাজেই আধার এবং ভোটার সংযুক্তিকরণ বাধ্যতামূলক কিভাবে হতে পারে প্রশ্ন তৃণমূলের।

তৃণমূল কংগ্রেসের প্রশ্ন, যদি আধার দেওয়া ঐচ্ছিক হয়, তবে কমিশন কেন কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকে? কেন্দ্রীয় সরকার যদি কমিশনের প্রস্তাবে সম্মতি না দেয়, তবে কমিশন কেন সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় না?

স্মারকলিপিতে ২০২২ সালের ক্যাগ-এর রিপোর্টের কথাও উল্লেখ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আধার তথ্যভান্ডারে মারাত্মক ত্রুটি ও অসামঞ্জস্য দেখা গিয়েছে — যেমন ভুল তথ্য-মিল, যাচাইয়ের সময় ত্রুটি, অথবা সংরক্ষণের ঘাটতি। সেই সঙ্গে ক্যাগ জানিয়েছে, বহু ক্ষেত্রেই অসম্পূর্ণ তথ্য বা দুর্বল বায়োমেট্রিক তথ্যের ভিত্তিতে একাধিক আধার নম্বর ইস্যু হয়েছে, যার ফলে একই ব্যক্তির নামে একাধিক আধার তৈরি হয়েছে বা নকল আধার জারি হয়েছে।

“এই ভুয়ো, ক্লোনড ও ডুপ্লিকেট আধার যদি ভোটার তালিকার সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়, তবে ভুতুড়ে ভোটারদের প্রবেশ একেবারে ঠেকানো যাবে না। কমিশনের কাছে আমাদের প্রশ্ন, এই আশঙ্কা রুখতে তাদের নির্দিষ্ট রণকৌশল কী?” — লিখেছে তৃণমূল কংগ্রেস।

তৃণমূল কংগ্রেসের আর এক বড় অভিযোগ, এখনও বহু ডুপ্লিকেট এপিক জারি রয়েছে। দলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত ২৭শে ফেব্রুয়ারি এই ইস্যু প্রথম প্রকাশ্যে আনেন। তার পর ৭ই মার্চ কমিশন এক প্রেস বিবৃতিতে জানায়, ২০০০ সাল থেকে দেশের বহু ভোটারের নামে একাধিক এপিক ইস্যু হয়েছে এবং আগামী তিন মাসের মধ্যে তারা সেই সমস্যার সমাধান করবে।

তৃণমূল কংগ্রেসের প্রশ্ন, “যখন এপিকের মধ্যেই এত গলদ থেকে গেছে, তখন আধার সংযুক্তির মাধ্যমে ভোটার তালিকায় আরও বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে না? কমিশন কি জানাতে পারে, বর্তমানে ঠিক কতগুলি ডুপ্লিকেট এপিক বিদ্যমান?”

তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, “এই মুহূর্তে এপিক-আধার সংযুক্তিকরণ অবিবেচক এবং তড়িঘড়ি করে নেওয়া সিদ্ধান্ত। এটি সমাধানের পথ নয়, বরং নতুন জটিলতার সৃষ্টি করবে।”

Share with

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *