বন্যার ভ্রূকুটি আটকাতে ২৮ টি নদী সংস্কারের পরিকল্পনা সেচ দপ্তরের
জিৎ দত্ত,মানুষের মতামত:ফি বছর বন্যা রাজ্যের জন্য একটা বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবছর বর্ষার মরশুম এলেই রাজ্যের একটা বিস্তীর্ণ অংশের মানুষকে সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই তা নিয়ে সক্রিয় হওয়ার জন্য সেচ দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন। মাঝে আর মাত্র দুই থেকে আড়াই মাস। আরো একটা বর্ষার মরশুম শুরু হওয়ার আগে রাজ্যের মানুষকে জল যন্ত্রণা থেকে মুক্ত করতে তৎপর হল প্রশাসন। রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং রাজ্যের জল নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতিতে এক বড় পদক্ষেপ নিতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
নবান্ন সূত্রে খবর, এই লক্ষ্যে রাজ্যের ২৮টি গুরুত্বপূর্ণ নদী, খাল এবং বিল সংস্কারের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এই উদ্যোগের ফলে একদিকে যেমন জলের স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় রাখা সম্ভব হবে, তেমনই অন্যদিকে বর্ষার অতিরিক্ত জল দ্রুত নিষ্কাশনের পথ প্রশস্ত হবে।
সেচ দপ্তরের এক আধিকারিক এর কথায়, মূলত এই বিষয়টির কথা মাথায় রেখেই এবার বাজেটে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে নদী বন্ধন নামে একটি প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছে। এই প্রকল্পের অংশ হিসাবে রাজ্যের ২৮ টি নদী খাল এবং বিল সংস্কারের বিষয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে এর জন্য প্রায় ১,১২১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই বিপুল অর্থে মূলত নদী ও খালগুলির পলি অপসারণের কাজে ব্যয় করা হবে। এর ফলে জলধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং জলের স্রোত আরও বাড়বে।
সরকারি সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই এই নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে বিস্তারিত রিপোর্ট সংগ্রহ করে জেলা কালেক্টরেটের মাধ্যমে একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করা করতে বলা হয়েছে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী, যে সমস্ত এলাকায় প্রতি বছর বর্ষাকালে জল জমে দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়, সেই অঞ্চলের নদী ও খাল সংস্কারকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
রাজ্যের বহু জেলায় অতিবৃষ্টির কারণে জলমগ্নতার সমস্যা দেখা যায়। এর প্রধান কারণ হল খাল ও নদীগুলিতে পলি জমে যাওয়া। রাজ্য সরকার এবার সেই সমস্যাগুলির সমাধানে বিশেষ নজর দিয়েছে।
শুধু তাই নয়, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্যের প্রস্তুতিও আরও জোরদার করা হচ্ছে। এই লক্ষ্যে একটি বিস্তারিত নির্দেশিকাও তৈরি করা হয়েছে। আগামী দিনে নদী ও খাল সংস্কারের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে নিবিড় সমন্বয় রেখে দ্রুত কাজ শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করার জন্য রাজ্য সরকারের একাধিক দপ্তর একযোগে কাজ করবে। এর মধ্যে কৃষি দপ্তর, জলসম্পদ দপ্তর, পঞ্চায়েত দপ্তর এবং জেলা প্রশাসন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, এই প্রকল্পটি সফলভাবে রূপায়ণ করা গেলে শুধু বন্যা নিয়ন্ত্রণই নয়, বর্ষাকালে বিভিন্ন এলাকায় জল জমে থাকার দীর্ঘমেয়াদী সমস্যাও অনেকাংশে লাঘব হবে। একই সঙ্গে সুখা মরশুমে চাষের জন্য জলের ব্যবস্থা ও সম্ভব হবে।