কুকথা,ভাষা সন্ত্রাস ও রাজনৈতিক বিতর্ক: ফের শিরোনামে দিলীপ ঘোষ
নিজস্ব প্রতিবেদক,মানুষের মতামত:পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে বিতর্ক নতুন কিছু নয়। তবে সম্প্রতি বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ফের কুকথা ও আক্রমণাত্মক মন্তব্যের জন্য শিরোনামে এসেছেন। নিজের পুরনো লোকসভা কেন্দ্র মেদিনীপুরের অন্তর্গত খড়গপুরে একটি রাস্তার উদ্বোধন করতে গিয়ে তিনি মহিলাদের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যালাপ করেন, যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে প্রবল প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। যদিও একাংশ সংবাদমাধ্যমে তাঁকে সমালোচনার শিকার হতে হয়েছে, তবু নিজের অবস্থান থেকে একটুও নড়েননি দিলীপ। বরং, তাঁর এই ভাষা ও আক্রমণাত্মক রাজনৈতিক অবস্থান আরও মজবুত হয়েছে দলের অন্দরেই।
বিতর্কের কেন্দ্রে দিলীপ ঘোষ
রাজনীতিতে দিলীপ ঘোষের উপস্থিতি বরাবরই তীব্র ও স্পষ্টবাদী। তিনি যে দলীয় আদর্শের বাইরে গিয়ে আপস করতে নারাজ, তা বহুবার প্রকাশ্যে এসেছে। তবে এবার তাঁর ভাষা সন্ত্রাসের অভিযোগ নিয়ে নতুন করে বিতর্ক ছড়িয়েছে। খড়গপুরে এক অনুষ্ঠানে মহিলাদের উদ্দেশে তাঁর কটূক্তি ও আক্রমণাত্মক কথাবার্তা রাজনৈতিক মহলে ঝড় তুলেছে।
এই প্রথম নয়, দিলীপ ঘোষ আগেও একাধিকবার বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। তিনি কখনও “গোমূত্র” নিয়ে মন্তব্য করে, কখনও বা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাসরি ব্যক্তিগত আক্রমণ করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছেন। তাঁর এই মন্তব্যের জন্য বিরোধী দলগুলি যেমন চড়া সুরে প্রতিবাদ করেছে, তেমনই দলের অন্দরেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তবে এবারের ঘটনায় তিনি আরও আগ্রাসী মনোভাব দেখিয়েছেন এবং নিজের বক্তব্যে অনড় থেকেছেন।
দলীয় সমর্থন এবং বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া
দিলীপ ঘোষের এই অবস্থানের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁরা প্রকাশ্যে দিলীপের মন্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে বিরোধীদের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছেন। শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছেন, দিলীপ ঘোষের মন্তব্যকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত করা হয়েছে এবং রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এই ইস্যুকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে।
অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে বিজেপিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, “বিজেপি নেতাদের মুখ থেকে ক্রমাগত কুকথা বেরোচ্ছে। এটা তাঁদের রাজনৈতিক কৌশলের অংশ। বাংলার মানুষ এই ধরনের নেতাদের প্রত্যাখ্যান করবে।”
২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন এবং দিলীপ ঘোষের রাজনৈতিক কৌশল
২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে বিজেপি রাজ্যে নিজেদের অবস্থান মজবুত করার চেষ্টা করছে। দিলীপ ঘোষের সাম্প্রতিক বক্তব্য ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, তিনি নিজের আগ্রাসী রাজনৈতিক কৌশল থেকে সরে আসবেন না। বরং, সমালোচনাকে উড়িয়ে দিয়ে নিজের স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই তিনি এগিয়ে যাবেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দিলীপ ঘোষের এই ধরনের মন্তব্য বিজেপির কট্টর সমর্থকদের আকৃষ্ট করতে পারে, কিন্তু রাজ্যের সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে বাংলার রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ভাষার শালীনতা নিয়ে যে ঐতিহ্য আছে, তা ভাঙলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে ভোটবাক্সে।
দিলীপ ঘোষ বরাবরই নিজের বেফাঁস মন্তব্যের জন্য পরিচিত, এবং সাম্প্রতিক ঘটনাও তার ব্যতিক্রম নয়। তবু তিনি যে নিজের অবস্থান থেকে একটুও সরছেন না, তা তাঁর “ডোন্ট কেয়ার” মনোভাব থেকেই স্পষ্ট। একদিকে দলীয় সমর্থন, অন্যদিকে বিরোধীদের চ্যালেঞ্জ – এই দুইয়ের মাঝে দাঁড়িয়ে দিলীপ ঘোষ তাঁর রাজনীতির কৌশল বজায় রাখছেন। তবে এই কৌশল তাঁকে এবং বিজেপিকে কতটা লাভ বা ক্ষতি করবে, তা সময়ই বলে দেবে।