পশ্চিমবঙ্গে ৩৫টি মুসলিম গোষ্ঠীকে ওবিসি তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার অভিযোগ,আইনি সহায়তা চেয়ে আবেদন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে
নিজস্ব প্রতিবেদক,মানুষের মতামত:পশ্চিমবঙ্গের ওবিসি তালিকা থেকে বেছে বেছে ৩৫টি মুসলিম গোষ্ঠীকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে প্রোগ্রেসিভ ইনটেলেকচুয়ালস অফ বেঙ্গল। এই বিষয়ে সংগঠনের সভাপতি মনজাত আলি বিশ্বাস রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে লিখিতভাবে আইনি সহায়তা চেয়ে আবেদন করেছেন। সংগঠনের দাবি, এই সিদ্ধান্তের ফলে রাজ্যের এক কোটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এবং বহু মানুষ তাদের সংরক্ষণের অধিকার হারাবেন।
হাইকোর্টের রায়ের প্রভাব
সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্যের ওবিসি সংক্রান্ত মামলায় এক গুরুত্বপূর্ণ রায় দেয়। আদালত জানায়, ২০১০ সালের পর পশ্চিমবঙ্গ সরকার যে ৭৭টি গোষ্ঠীকে অনগ্রসর শ্রেণির (OBC) অন্তর্ভুক্ত করেছিল, তা বৈধ নয়। আদালতের যুক্তি, এই সংরক্ষণ দেওয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। এর ফলে ২২ লক্ষের বেশি ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা রাজ্যের সংখ্যালঘু এবং অনগ্রসর শ্রেণির মানুষের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
এনসিবিসির পদক্ষেপ
এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ন্যাশনাল কমিশন ফর ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসেস (NCBC) পশ্চিমবঙ্গে ওবিসি তালিকা পুনর্বিবেচনার উদ্যোগ নিয়েছে। কমিশনের চেয়ারম্যান হংসরাজ গঙ্গারাম আহির জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার ২০১১ সালে ৪৬টি নতুন গোষ্ঠীকে কেন্দ্রীয় ওবিসি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছিল, যার মধ্যে ৩৭টি গোষ্ঠী ২০১৪ সালে যুক্ত হয়। অভিযোগ উঠেছে, এই ৩৭টির মধ্যে ৩৫টিই মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত, যা বাদ দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
রাজ্য সরকারের অবস্থান
রাজ্য সরকার এই বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেও ওবিসি সংরক্ষণের বিষয়ে কেন্দ্রের পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন। বিরোধীরা এই সিদ্ধান্তকে “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” বলে দাবি করছে এবং মুসলিম সম্প্রদায়কে বঞ্চিত করার চক্রান্ত হিসেবে দেখছে।
আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি
প্রোগ্রেসিভ ইনটেলেকচুয়ালস অফ বেঙ্গল মনে করছে, এই সিদ্ধান্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষাগত ও চাকরির সুযোগের ওপর বড় আঘাত হানবে। তাই তারা রাজ্য সরকারকে উচ্চতর আদালতে যাওয়ার জন্য আইনি সহায়তা দিতে অনুরোধ করেছে। সংগঠনটির মতে, সংরক্ষণ বাতিল হলে এক কোটি সংখ্যালঘু মানুষের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
এই বিষয়ে আগামী দিনে রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে সংঘাত আরও তীব্র হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাজনৈতিক ও সামাজিক স্তরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়ায বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়াতে পারে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।