দিল্লির ফলাফলের প্রভাব বাংলায় না পড়ার সম্ভাবনা প্রবল বলেই মত বিশেষজ্ঞদের
নিজস্ব প্রতিবেদক,মানুষের মতামত:দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে আম আদমি পার্টির ভরাডুবি এবং বিজেপির ঐতিহাসিক জয় ভারতের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করেছে। ২৭ বছর পর দিল্লির ক্ষমতায় ফিরেছে বিজেপি, যা নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহের নেতৃত্বের বড় সাফল্য। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে দিল্লির শাসনে থাকা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আপকে কার্যত নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে বিজেপি।
এই রাজনৈতিক পালাবদলের পর এবার প্রশ্ন উঠছে, বাংলায় এর কি প্রভাব পড়তে পারে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস কি একইভাবে চাপে পড়বে? বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব – সুকান্ত মজুমদার,শুভেন্দু অধিকারী এবং দিলীপ ঘোষরা কি বাংলার শাসকদলকে টক্কর দিতে পারবেন?
দিল্লির ফলাফল ও বাংলার বাস্তবতা
দিল্লির রাজনীতি এবং পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক বাস্তবতার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। দিল্লিতে আপের মূল শক্তি ছিল জনকল্যাণমূলক প্রকল্প এবং দুর্নীতিবিরোধী ভাবমূর্তি। কিন্তু সাম্প্রতিক দুর্নীতির অভিযোগ এবং কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাতের রাজনীতি কেজরিওয়াল সরকারের জনপ্রিয়তায় ধাক্কা দিয়েছে। বাংলার ক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তা এখনো যথেষ্ট শক্তিশালী। তার সরকার একাধিক জনকল্যাণমূলক প্রকল্প যেমন লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী, রেশন প্রকল্পের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সমর্থন ধরে রেখেছে।পাশাপাশি ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপি যে সাফল্য পেয়েছিল তা ২০২৪ সালের ভোটে ম্লান হয়েছে ।
তবে, দিল্লির নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপি যে বাংলায় নতুন আক্রমণাত্মক অবস্থান নেবে, তা স্পষ্ট। ইতিমধ্যেই শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছেন, দিল্লির পর এবার বাংলা জয় করবে বিজেপি।
তৃণমূলের শক্তি ও চ্যালেঞ্জ
তৃণমূল কংগ্রেস এখনো পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও তারা বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছে। তবে শাসকদলের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠে এসেছে, যার মধ্যে শিক্ষক নিয়োগ কেলেঙ্কারি এবং কয়লা-পাথর পাচার মামলা অন্যতম। এই ইস্যুগুলিই বিজেপি হাতিয়ার করতে চাইছে।
তবে বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর। তার নেতৃত্বে দল এখনো ঐক্যবদ্ধ। দিল্লিতে আপের মতো দলীয় কোন্দল তৃণমূলে এখনো তেমনভাবে দেখা যায়নি।
বিজেপির চ্যালেঞ্জ
দিল্লির জয় বিজেপির জন্য বড় সাফল্য হলেও বাংলার বাস্তবতা অনেক কঠিন। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি বড় লক্ষ্য নিয়ে নেমেছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ২০০ পার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েও ৭৭ আসনে থেমে যায়। পরে সেই সংখ্যা আরও কমে যায়।
বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের মধ্যেও কিছুটা অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব রয়েছে। সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারী ও দিলীপ ঘোষদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব মাঝে মধ্যেই প্রকাশ্যে আসে। সংগঠনের স্তরে বিজেপি এখনো তৃণমূলের সমকক্ষ হয়ে উঠতে পারেনি।
২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল বাংলায় সরাসরি প্রভাব ফেলবে না, তবে বিজেপির আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। বাংলার ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি নতুন করে লড়াইয়ের পরিকল্পনা করবে।
তবে বিজেপির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানো, আঞ্চলিক নেতৃত্বকে আরও কার্যকর করা এবং বাংলার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতাকে বোঝা। দিল্লির জয় বিজেপির মনোবল বাড়ালেও, বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস এখনো কঠিন প্রতিপক্ষ বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।