ভাষা দিবসের আগেই হাসপাতালে প্রতুল মুখোপাধ্যায়,শোনা যাবে না ‘আমি বাংলায় গান গাই’
নিবারণ চক্রবর্তী,মানুষের মতামত:বাংলা গানের জগতে এক অবিস্মরণীয় নাম প্রতুল মুখোপাধ্যায়। তাঁর লেখা ও সুর করা ‘আমি বাংলায় গান গাই’ গানটি বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি ভালবাসার এক অনন্য প্রতীক। ভাষা দিবসের মতো গুরুত্বপূর্ণ দিনে এই গান যেন আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি অংশ নিতেন। কিন্তু এবার সেই চেনা দৃশ্য বদলে যাচ্ছে। কারণ, জনপ্রিয় এই কবি-গায়ক দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ এবং বর্তমানে তিনি কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
অসুস্থ প্রতুল, খোঁজ নিলেন মুখ্যমন্ত্রী
প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের অসুস্থতার খবর জানার পরই উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার বিধানসভার অধিবেশন শেষে তিনি এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন এবং তাঁর শারীরিক অবস্থার আপডেট নেন। শুধু তাই নয়, কবি-গায়কের স্বাস্থ্যের বিষয়ে আরও বিশদে জানার জন্য মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের দুই মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন এবং অরূপ বিশ্বাসকে হাসপাতালে পাঠান। তাঁরা প্রতুলের সঙ্গে দেখা করে চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং পরে মুখ্যমন্ত্রীকে ফোনে বিস্তারিত জানান।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থা এখনও স্থিতিশীল নয়। চিকিৎসকরা তাঁকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। তাঁর শারীরিক অবস্থা দ্রুত উন্নতি করুক, এটাই প্রার্থনা করছেন তাঁর অনুরাগী এবং সমগ্র বাংলা।
ভাষা দিবসে শূন্যতা
‘আমি বাংলায় গান গাই’—এই গানটি শুধু একখানি গান নয়, বরং বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি ও জাতিগত আত্মপরিচয়ের এক চিরন্তন প্রকাশ। ভাষা দিবসের মতো দিনে এই গানের গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় ভাষা দিবস উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে প্রতুল মুখোপাধ্যায় সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে গান গাইতেন। কিন্তু এবছর তিনি সেই মঞ্চে থাকতে পারবেন না, যা বাংলা গানের ভক্তদের জন্য এক দুঃখের খবর।
তাঁর অনুপস্থিতিতে বাংলা ভাষার প্রতি তাঁর অবদানকে স্মরণ করা হবে, কিন্তু তাঁর কণ্ঠস্বরে সেই অমর গান শোনা যাবে না—এটা নিঃসন্দেহে এক অপূরণীয় শূন্যতা সৃষ্টি করবে।
বাংলা গানের প্রতুল যুগ
প্রতুল মুখোপাধ্যায় শুধুমাত্র এক গায়ক বা গীতিকার নন, তিনি এক আন্দোলন। তাঁর গান মানে প্রতিবাদ, তাঁর সুর মানে প্রতিরোধ, তাঁর কথা মানে মানুষের কথা। তিনি মূলত স্বাধীনচেতা গানের ধারা অনুসরণ করতেন, যা বাংলা গণসংগীতের জগতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছিল। ‘আমি বাংলায় গান গাই’ গানের পাশাপাশি ‘গাড়ি চলে না’, ‘কথা বলবো না’, ‘আমি রাজনীতি বুঝি না’-র মতো গানগুলিও মানুষের মনে দাগ কেটে গেছে।
তাঁর গান সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। যে সময়ে বাংলা ভাষার অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে, সেখানে প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের গান বারবার মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছে।
প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের অসুস্থতা বাংলা গানের জগতে এক দুঃখজনক অধ্যায়। ভাষা দিবসের মতো গুরুত্বপূর্ণ দিনে তাঁর অনুপস্থিতি অনুভব করবে গোটা বাংলা। তবে তাঁর সৃষ্টি, তাঁর গান, তাঁর সুর চিরকাল বাংলার হৃদয়ে গেঁথে থাকবে।
সঙ্গীতপ্রেমীরা এখন শুধু তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করছেন, যাতে আবার তিনি ফিরে এসে নিজের সুরে বাংলা ভাষার জয়গান গাইতে পারেন। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে, কারণ বাংলা মানেই প্রতুল, আর প্রতুল মানেই বাংলা।