NewsRecent News

মেয়র পারিষদদের ওয়ার্ডে বেআইনি নির্মাণ-হেলে পড়া বাড়ির সংখ্যা নিয়ে চাপে কলকাতা পুরসভা

নিবারণ চক্রবর্তী,মানুষের মতামত: কলকাতা শহরে বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তবে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলি পুরসভার জন্য বাড়তি অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একের পর এক ওয়ার্ডে বহুতল ভবনের বেআইনি নির্মাণ এবং হেলে পড়া বাড়ি নিয়ে অভিযোগ উঠছে, যার ফলে বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বিশেষ করে, কয়েকটি ওয়ার্ডে বাড়ি হেলে পড়ার ঘটনা কলকাতা পুরসভাকে অপ্রস্তুত অবস্থায় ফেলে দিয়েছে।

অস্বস্তির সূত্রপাত হয় ৯৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাঘাযতীন এলাকায়, যেখানে স্থানীয় কাউন্সিলর তথা মেয়র পারিষদ মিতালী বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওয়ার্ডে একটি বহুতল হেলে পড়ে। এরপর মেয়র পারিষদ অসীম বসুর ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের ভবানীপুরে এবং সন্দীপন সাহার ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডের ট‍্যাংরায় একই ধরনের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগ ব্যবস্থা নিলেও কেন এমন ঘটনা ঘটছে, তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেনি পুর কর্তৃপক্ষ।

পুরসভার অবস্থান ও বিতর্ক

বাড়ি হেলে পড়ার ঘটনা সামনে আসার পর কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের একটি মন্তব্য নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, “কলকাতা শহরের সব হেলে পড়া বাড়ি বিপজ্জনক নয়।” তার এই বক্তব্যের পর বিরোধীরা আরও সরব হয়েছে। বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ অভিযোগ করেন যে, এই মন্তব্য পুরসভার দুর্বলতা ও ব্যর্থতাকেই প্রকাশ করে। তিনি আরও দাবি করেন, বেআইনি নির্মাণ রুখতে পুরসভা ব্যর্থ হচ্ছে এবং প্রশাসনের নজরদারির অভাবেই এই ধরনের ঘটনা ঘটছে।

বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছে, কীভাবে শহরের বিভিন্ন এলাকায় বেআইনি বহুতল তৈরি হচ্ছে এবং কেন এই বিষয়ে আগে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, শহরে জমির চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিয়ম না মেনে নির্মাণ করার প্রবণতা বেড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে যথাযথ অনুমতি ছাড়াই বহুতল নির্মাণ হচ্ছে, যা পরে বড় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

সমস্যা কোথায়?

অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, বেআইনি নির্মাণ বন্ধ করতে পুরসভার নির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। যেমন—

1. নিয়মিত নজরদারি ও বিল্ডিং ইন্সপেকশন: প্রতিটি ওয়ার্ডে পুরসভার তরফে নিয়মিত পরিদর্শন করা উচিত, যাতে বেআইনি নির্মাণ শুরুর আগেই ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

2. কঠোর আইনি ব্যবস্থা: যারা বেআইনি নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত, তাদের বিরুদ্ধে কড়া আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধুমাত্র ভবন ভেঙে ফেলা যথেষ্ট নয়, দোষীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

3. পুরকর্মীদের জবাবদিহিতা: অনেক ক্ষেত্রেই অভিযোগ ওঠে যে, পুরসভার কিছু অসাধু কর্মকর্তা বেআইনি নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত থাকেন। এই বিষয়ে স্বচ্ছ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।

4. জনসচেতনতা বৃদ্ধি: বেআইনি নির্মাণের ফলে কী ধরনের বিপদ হতে পারে, তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা জরুরি।

কলকাতা পুরসভা যদি যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ ঘটনা ঘটতে পারে। বেআইনি নির্মাণ শুধুমাত্র শহরের নান্দনিকতা নষ্ট করছে না, বরং মানুষের জীবনের জন্যও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। প্রশাসনের গাফিলতি ও নজরদারির অভাবের সুযোগ নিচ্ছে অসাধু নির্মাতারা। এখন সময় এসেছে, পুরসভা আরও কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করুক, যাতে শহরের ভবিষ্যৎ নিরাপদ থাকে।

Share with

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *