নতুন সভাপতির প্রতি আস্থা নিয়েই ফের জাগছে বঙ্গ বিজেপির নিচু তলা
প্রতিবেদক,মানুষের মতামত:বাঙালি বিজেপি কর্মীদের মনোবলে নতুন সঞ্চার এনেছেন সদ্য নিযুক্ত রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। সুকান্ত মজুমদারকে সরিয়ে তাঁর হাতে রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব তুলে দেওয়ার পর থেকেই দলীয় কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে এক নতুন আশার আলো দেখা দিয়েছে। দলের অভ্যন্তরে দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্বের অভাব, মতপার্থক্য এবং সাংগঠনিক দূরত্ব নিয়ে যে হতাশা ছিল, তা কাটিয়ে উঠতে পারেন কি না শমীক— সেই দিকেই এখন তাকিয়ে বিজেপি শিবির।
শমীক ভট্টাচার্য আদতে দলের একজন আদ্যন্ত সংগঠক। ১৯৮০ সালে ভারতীয় জনতা পার্টি প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই দলের সঙ্গে যুক্ত। তারও আগে ১৯৭০-এর দশকের শেষ থেকে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ। বাম জমানায় যখন বাংলায় বিজেপি কার্যত নীরব, তখনও দলের কাজ তিনি চালিয়ে গিয়েছেন মাটি কামড়ে। দলে শৃঙ্খলা ও নিবেদিতপ্রাণ কর্মী হিসেবেই পরিচিত তিনি। ২০২৩ সালে তিনি রাজ্যসভার সাংসদ নির্বাচিত হন। ফলে সাংগঠনিক ও সংসদীয়— দুই অভিজ্ঞতাই তাঁর ঝুলিতে রয়েছে।
এই মুহূর্তে শমীকের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল, আগামী ৮ থেকে ১০ মাসের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হতে চলা পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন। তাই দলকে সাংগঠনিক দিক থেকে শক্তিশালী করে তোলার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছেন শমীক। সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম বার্তায় তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, আদি ও নয়া— দুই শিবিরকেই এক সূত্রে বাঁধার লক্ষ্যে কাজ করবেন তিনি। তাঁর কথায়, “আমি বিশ্বাস করি, দলে সব ধরণের মানুষের অবদান আছে। সবাইকে নিয়েই এগোতে হবে।”
শমীকের এই বার্তা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ বিগত কয়েক বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির অভ্যন্তরে দ্বন্দ্ব এবং গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বাড়ছিল। একদিকে ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী, যিনি মূলত তৃণমূল থেকে আসা হেভিওয়েট নেতা, অপরদিকে ছিলেন দলের আদিরা, যাঁদের অনেকে দীর্ঘদিনের অবহেলায় তিতিবিরক্ত হয়ে পড়েছিলেন। শমীক নিজে আদির ঘরানার হওয়ায় তাঁর প্রতি নিচুতলার বহু পুরনো কর্মীর আস্থা তৈরি হয়েছে। আবার শুভেন্দুর মতো কট্টর হিন্দুত্ববাদী নেতার সঙ্গেও সমতা বজায় রেখে চলার কথা জানিয়েছেন তিনি— যা বোঝায়, সংঘের প্রভাবে তৈরি হলেও শমীক আপাতত মিশ্র নেতৃত্বে দল চালাতে চাইছেন।
বিজেপির একটি মহলের মতে, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পরে একাধিক নেতার দলত্যাগ এবং সাংগঠনিক দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। তৃণমূলের লাগাতার রাজনৈতিক চাপে কোণঠাসা হয়ে পড়া বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব অনেক ক্ষেত্রেই দিশাহীন মনে হচ্ছিল। কিন্তু শমীকের মতো স্থিতধী, অভিজ্ঞ এবং সংঘপ্রবাহিত নেতা সামনে আসায় সংগঠন আবার গতি পেতে পারে বলেই মনে করছেন অনেকে।
তবে এক্ষেত্রে শমীকের চ্যালেঞ্জ কম নয়। সংগঠনের কাঠামোকে তৃণমূল স্তরে পৌঁছে দেওয়া, কর্মীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন, এবং সর্বোপরি লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতিতে দলকে উজ্জীবিত রাখা— এই তিনটি দিকেই তাঁর দক্ষতা প্রমাণ করতে হবে। বিশেষ করে বাংলায় ধর্মীয় মেরুকরণ, জাতিগত রাজনীতি এবং জনসংযোগ— এই তিনস্তরে বিজেপির ভবিষ্যৎ সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করছে শমীকের কার্যক্রমের ওপর।
তাঁর নেতৃত্বে কেমন করে ঘুরে দাঁড়ায় বঙ্গ বিজেপি,তা দেখতে আপাতত অপেক্ষায় গোটা রাজ্য। শমীক ভট্টাচার্যর অভিজ্ঞতা ও মাটির কাছাকাছি থাকার দক্ষতাই এবার পদ্মশিবিরের প্রধান ভরসা।