“দাঙ্গাবাজরা বহিরাগত, বিভাজনের রাজনীতি রুখুন” – রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে মমতার খোলা চিঠি
জিৎ দত্ত,মানুষের মতামত:ওয়াকফ সংশোধনী বিল ঘিরে মুর্শিদাবাদের কিছু অঞ্চলে সাম্প্রতিক উত্তেজনার প্রেক্ষিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যবাসীর উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি প্রকাশ করলেন। শান্তির বার্তা পৌঁছে দিতে মুখ্যমন্ত্রীর এই চিঠিতে যেমন উঠে এসেছে তার গভীর উদ্বেগ, তেমনই রয়েছে বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধের আহ্বান।
চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় অভিযোগ করেছেন, বিজেপি এবং তাদের মিত্র শক্তিগুলি, যার মধ্যে রয়েছে আরএসএস-ও, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রাজ্যে সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টি করতে তৎপর হয়েছে। এক ‘উস্কানিমূলক ঘটনার’ পরিপ্রেক্ষিতে তারা রাজ্যের ঐক্য ও সামাজিক সম্প্রীতিকে আঘাত করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তিনি।
“আমি পশ্চিমবঙ্গের মাটি ও মানুষের সন্তান। দেশ ও রাজ্যকে ভালোবেসেই এই আবেদন জানাচ্ছি— সবাই শান্ত থাকুন,” লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। দাঙ্গাকারীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “যাঁরা দাঙ্গা ছড়াতে চেয়েছেন, তাঁদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হচ্ছে। পুলিশ তদন্তে নেমেছে, দুই থানার ওসি-কে সরানো হয়েছে।”
রামনবমীর দিন রাজ্যে শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে— এই তথ্য তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পরবর্তীতে ওয়াকফ সংশোধনী আইনকে ঘিরে রাজ্যে উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি বলেন, “ভারতের হিন্দুত্ব রামকৃষ্ণ-স্বামী বিবেকানন্দের হিন্দুত্ব, যা সকলকে ভালোবাসতে শেখায়। বিজেপি-আরএসএসের হিন্দুত্ব তার সম্পূর্ণ বিপরীত— বিভেদ ও বিদ্বেষে ভরা।”
চিঠির একটি অংশে মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন, “উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ কিংবা রাজস্থানে প্রতিবাদ সভার অনুমতি নেই। অথচ পশ্চিমবঙ্গে সংবিধানবিরোধী কোনও রীতি নেই। বরং মানবিক সহানুভূতি, সহিষ্ণুতা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যই বাংলার চালচিত্র।”
মণিপুরে দীর্ঘদিন ধরে চলা জাতিগত হিংসা, উত্তরপ্রদেশে নারী নির্যাতনের ঘটনা, কিংবা অসম-ত্রিপুরার উত্তপ্ত পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ সম্পূর্ণ আলাদা। এখানে কেউ কষ্ট পেলে, সরকার পাশে দাঁড়ায়। বাংলায় বুলডোজার চলে না, চলে সহমর্মিতা।”
তাঁর কথায়, “যারা দাঙ্গা করে, তারা বাইরে থেকে এসে দাঙ্গা লাগিয়ে চলে যায়। কিন্তু আমরা, যারা এখানকার, আমাদেরই ঐক্যবদ্ধ হয়ে সেই ষড়যন্ত্র রুখতে হবে।” বহিরাগত রাজনৈতিক শক্তির অপপ্রচার ও বিভাজনমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধেও জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী।
চিঠির শেষে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ভারত তীর্থ’ কবিতা উদ্ধৃত করে তিনি লেখেন, “জনগণ ঐক্য-বিধায়ক, জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা।”
এই চিঠির মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী আবারও বুঝিয়ে দিলেন, বাংলার মাটিতে বিদ্বেষের রাজনীতি সফল হবে না। তিনি আহ্বান জানালেন— “শান্ত থাকুন, বিভ্রান্ত হবেন না, একসঙ্গে থাকুন।”