ফের শুরু হচ্ছে কলকাতা পুরসভার হকার উচ্ছেদ অভিযান:নয়া নীতির পথে প্রশাসন?
নিজস্ব প্রতিবেদক,মানুষের মতামত:চলতি মাসেই শুরু হতে চলেছে কলকাতা পুরসভার হকার উচ্ছেদ অভিযান। সম্প্রতি পুরসভার টাউন ভেন্ডিং কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। মূলত মধ্য কলকাতার ব্যস্ততম অঞ্চলগুলি, যেমন ধর্মতলা, চাঁদনি চক, বিধান মার্কেট, এবং কলকাতা প্রেস ক্লাব চত্বর—এসব এলাকায় এই অভিযান চালানো হবে। দীর্ঘদিন ধরেই শহরের ফুটপাত এবং রাস্তার এক বড় অংশ দখল করে রেখেছেন হকাররা, যা পথচলতি সাধারণ মানুষের সমস্যা সৃষ্টি করছে। ট্রাফিক জ্যাম, জনসাধারণের চলাচলে বিঘ্ন এবং ব্যবসায়ীদের অসুবিধার কথা মাথায় রেখে প্রশাসন হকার নীতিতে কড়া অবস্থান নিয়েছে।
হকার সমস্যা ও প্রশাসনিক উদ্যোগ
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্নে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে হকার সমস্যার উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি অভিযোগ করেন যে, শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলি দখল করে রাখা হকারদের নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে। সেই বৈঠকের পর কলকাতা পুরসভাকে একটি স্পষ্ট নীতি তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়। পুরসভা দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে প্রথম দফায় হকারদের চিহ্নিত করতে সমীক্ষা চালায়, তবে শারদোৎসবের কারণে সেই কাজ মাঝপথে থেমে যায়।
এবার পুরসভা আবারও সেই কাজ শুরু করতে চাইছে এবং সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে হকারদের নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইছে। টাউন ভেন্ডিং কমিটি বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেছে এবং কোথায় কত সংখ্যক হকার আছেন, কোন কোন এলাকায় ফুটপাত ও রাস্তা দখলের মাত্রা সবচেয়ে বেশি, তা চিহ্নিত করা হয়েছে। এই সমীক্ষার ভিত্তিতেই অভিযান পরিচালিত হবে।
হকার নীতি: প্রশাসনের পরিকল্পনা
কলকাতা পুরসভা চায়, শহরের প্রতিটি অঞ্চলে একটি নির্দিষ্ট হকার জোন তৈরি হোক, যেখানে লাইসেন্সপ্রাপ্ত হকাররা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে বসতে পারবেন। কিন্তু ফুটপাত বা প্রধান রাস্তা দখল করে ব্যবসা করা যাবে না। নতুন নীতির আওতায়, যেসব হকারদের লাইসেন্স নেই, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করেই সরিয়ে দেওয়া হবে। তবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসা হকারদের জন্য বিশেষ বিকল্প ভাবা হচ্ছে।
পুরসভার নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী:
1. নিয়মিত অভিযান চালানো হবে – শুধু অভিযান চালিয়েই শেষ নয়, পুরসভা এটি নিশ্চিত করতে চাইছে যে, হকাররা পুনরায় রাস্তা দখল করতে না পারেন।
2. নির্দিষ্ট হকার জোন – প্রতিটি অঞ্চলে নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় হকারদের বসার অনুমতি থাকবে।
3. লাইসেন্সপ্রাপ্ত হকারদের ছাড় – যারা পুরসভার অনুমোদনপ্রাপ্ত হকার, শুধুমাত্র তারাই নির্দিষ্ট জায়গায় ব্যবসা করতে পারবেন।
4. অবৈধ হকারদের উচ্ছেদ – যাদের কোনো অনুমতি নেই, তাদের রাস্তায় বসতে দেওয়া হবে না এবং কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সামাজিক প্রভাব ও প্রতিবাদ
এই অভিযানের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই কলকাতার বিভিন্ন হকার সংগঠন ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তাদের দাবি, বহু বছর ধরে যারা ফুটপাতে ব্যবসা করছেন, তাদের আচমকা সরিয়ে দিলে জীবিকা হারানোর আশঙ্কা তৈরি হবে। অনেকেই বিকল্প পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন। তবে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, এই নীতির উদ্দেশ্য কাউকে বেকার করা নয়, বরং শহরের শৃঙ্খলা বজায় রাখা।
অনেক নাগরিক এবং ব্যবসায়ী মহল কলকাতা পুরসভার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। বিশেষ করে, বড় ব্যবসায়ীরা এবং পথচারীরা মনে করছেন, হকারদের নিয়ন্ত্রণে আনা হলে শহরের যানজট এবং ফুটপাতের সমস্যা অনেকটাই কমবে।
কলকাতা পুরসভার এই হকার উচ্ছেদ অভিযান শহরের পরিবেশকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। তবে এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসনকে অবশ্যই হকারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ছোট ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত না হন। হকার নীতির কার্যকর প্রয়োগের ওপর নির্ভর করছে কলকাতার শহুরে ব্যবস্থাপনার ভবিষ্যৎ।