NewsPublic Interest News

ক্রমবর্ধমান তাপপ্রবাহ: প্রকৃতির প্রতিশোধ নাকি মানবসৃষ্ট বিপর্যয়?

নিজস্ব প্রতিবেদক,মানুষের মতামত:চলতি বছর মার্চ-এপ্রিল থেকেই পশ্চিমবঙ্গসহ সমগ্র পূর্ব ভারতের মানুষ সূর্যের তীব্র রোষের সম্মুখীন হচ্ছেন। তাপমাত্রার পারদ কোথাও কোথাও ৪০ ডিগ্রি ছুঁয়ে ফেলেছে, যা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটাই বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, মে মাসে এই উত্তাপ আরও তীব্র হতে পারে, যা জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলতে পারে। পরিবেশবিদরা বলছেন, লাগামছাড়া নগরায়ণ, বন ধ্বংস এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেই এই তাপদাহ ক্রমেই ভয়াবহ আকার নিচ্ছে।

 

তাপপ্রবাহের কারণ

 

আবহাওয়াবিদদের মতে, এই অস্বাভাবিক তাপমাত্রার মূল কারণগুলির মধ্যে অন্যতম হল বৈশ্বিক উষ্ণায়ন। গত কয়েক দশকে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যার প্রভাব সরাসরি পড়েছে ভারতীয় উপমহাদেশেও।

 

পরিবেশবিদদের মতে, বনাঞ্চল ধ্বংস ও শহরের কংক্রিটের জঙ্গলে পরিণত হওয়ার ফলে প্রাকৃতিক শীতলীকরণ প্রক্রিয়ার ব্যাঘাত ঘটছে। বড় বড় গাছ কেটে ফেলার ফলে ছায়ার অভাব দেখা দিচ্ছে, মাটির আর্দ্রতা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে, এবং বাতাসে আর্দ্রতা কমে যাওয়ার ফলে উষ্ণতা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

 

এছাড়াও, শহরাঞ্চলে কল-কারখানার ধোঁয়া, যানবাহনের দূষণ এবং এয়ার কন্ডিশনারের অত্যধিক ব্যবহার পরিবেশকে আরও গরম করে তুলছে।

 

প্রভাব ও বিপদ

 

এই অতিরিক্ত তাপমাত্রা জনস্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। গরমের ফলে হিট স্ট্রোক, পানিশূন্যতা, লো ব্লাড প্রেসার এবং বিভিন্ন চর্মরোগের সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষত শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা আরও মারাত্মক হতে পারে।

 

শুধু মানবজীবনই নয়, কৃষিও এই তীব্র গরমের শিকার হচ্ছে। জলস্তর ক্রমশ নিচে নেমে যাওয়ায় চাষাবাদের উপর বিপরীত প্রভাব পড়ছে। নদী, পুকুর, জলাশয়ের জল দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে, যার ফলে মাছচাষ এবং কৃষিকাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

 

সমাধানের উপায়

 

পরিবেশবিদদের মতে, এই দাবদাহ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য দীর্ঘমেয়াদী ও সংক্ষিপ্তমেয়াদী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

 

১. বৃক্ষরোপণ ও বন সংরক্ষণ: শহর ও গ্রামে আরও বেশি করে গাছ লাগানো দরকার, বিশেষত বড় ছায়াযুক্ত গাছ।

2. জল সংরক্ষণ: ভূগর্ভস্থ জলস্তর পুনরুদ্ধার করতে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করতে হবে।

3. সবুজ ছাদ ও উন্মুক্ত স্থান বৃদ্ধি: শহরাঞ্চলে ‘সবুজ ছাদ’ বা ছাদবাগান করা হলে তা তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করবে।

4. জ্বালানির সঠিক ব্যবহার: জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে নজর দিতে হবে।

5. সচেতনতা বৃদ্ধি: গরমে কীভাবে নিজেকে রক্ষা করা যায়, সে সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে হবে।

 

অতিরিক্ত তাপমাত্রা শুধু প্রকৃতির রোষ নয়, বরং মানবসৃষ্ট সমস্যার ফলাফল। বনাঞ্চল কেটে ফেলা, জলদূষণ, এবং অতিরিক্ত নগরায়ণের কারণে প্রকৃতি তার ভারসাম্য হারাচ্ছে, যার ফলস্বরূপ আমরা এই বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছি। এখনই যদি সচেতন না হই, তবে আগামী দিনে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। তাই এখনই সময় পরিবেশ রক্ষার দিকে মনোযোগ দেওয়ার এবং একটি টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার।

Share with

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *