ঈদের মঞ্চে অভিষেকের ‘অভিষেক’ ঘটালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
অনিন্দিতা সিনহা,মানুষের মতামত:এই মুহূর্তে বাংলার অলিখিত যুবরাজ তিনি। রাজ্যের বর্তমান শাসক দলের অন্যতম ভরসাও তিনি। তাঁকে ঘিরেই সৃষ্টি হচ্ছে আগামীর ক্ষমতার নিউক্লিয়াস। যাঁকে আজ থেকে প্রায় বারো বছর আগে রাজনীতির রুক্ষ জমিতে রোপণ করেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেদিনের সেই চারা গাছ আজ ক্রমশই মহীরুহে পরিণত হওয়ার পথে দ্রুত বেগে অগ্রসর হচ্ছে। তবে এই অগ্রসর হওয়ার পথ যে খুব সহজ সরল কিংবা মসৃণ ছিল, তা কিন্তু একেবারেই নয়। তবে সেই সব প্রতিবন্ধকতাকে নিজস্ব ক্যারিশমা ও কূটনৈতিক বুদ্ধি দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়েছেন স্বয়ং দলনেত্রী। আর এভাবেই তৃণমূল সুপ্রিমোর নিশ্চিন্ত নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে থাকতে থাকতে ধীরে ধীরে নিজের শিকড় দলের গভীরে ক্রমশ ছড়িয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভ্রাতুষ্পুত্র অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের অনেকেই যাঁকে এখন থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরসূরী রূপে ক্ষমতার অলিন্দে দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠেছে। দলের সাধারণ কর্মী সমর্থকদের এই চাওয়ার মধ্যে যে কোনও ভুল নেই, ঈদের সকালে সেটাই যেন ফের একবার স্পষ্ট করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দলের মধ্যে তাঁর একমাত্র উত্তরসূরী যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়,সেটা অনেক আগেই রাজ্যের মানুষের কাছে স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি।আর এবার ঈদের সকালে রেড রোডের মঞ্চে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়ে যেন এক ঢিলে দুই পাখি মারলেন নেত্রী। এদিনের এই ঘটনার মাধ্যমে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে যেমন ফের একবার বার্তা পাঠালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।তেমনি আবার সুকৌশলে দলের কর্মী সমর্থক থেকে শুরু করে বিরোধী রাজনৈতীক দলগুলির কাছেও এই বার্তা পৌঁছে দিলেন সুপ্রিমো যে,তাঁর অবর্তমানে দলের হয়ে শেষ কথা যিনি বলবেন এক এবং একমাত্র অভিষেক। এখানেই লক্ষণীয়,এর আগেও রেড রোডের নামাজে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেই হাজির হয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এবারেই প্রথম অভিষেক এর অভিষেক হল রেড রোডের ঈদের নামাজের মঞ্চে। যেখানে উপস্থিত এই বাংলার বিভিন্ন ক্ষেত্রের হাজার হাজার মুসলিম প্রতিনিধি। আর কে না জানে, তৃণমূলের ক্ষমতার অলিন্দে থাকার অন্যতম বৃহৎ কারিগর হল এই মুসলিম সম্প্রদায়-এর মানুষজন। এই জনগোষ্ঠীকে তৃণমূলের নিউক্লিয়াস বললে খুব একটা ভুল বলা হবে না। এমন এক গুরুত্ত্বপূর্ণ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তৃণমূল নেত্রীর এভাবে অভিষেকের অভিষেক ঘটানোর পিছনে ঠিক কোন অঙ্ক কাজ করছে সেটা একমাত্র তিনিই বলতে পারবেন। তবে সাদা চোখে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে এই ঘটনার একটাই ব্যাখ্যা হয়, তৃণমূল মানেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর নেত্রীর ঠিক পরেই রয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই নিয়ে আর কোথাও কোনও রকম দ্বিমত নেই। এমনকি দলের মধ্যে যতই অন্তরকলহ বা বিবাদ থাক না কেন। তাতে করে এই সমীকরণে কোনও পরিবর্তন হবে না। এটাই যেন ছিল এবারের ঈদের মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশেষ মেসেজ। যার অনুরণন রাজ্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে পৌঁছে গিয়েছে দিল্লির মসনদ পর্যন্ত, এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।