NewsPolitics

২০২৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে আসন পুনর্বিন্যাস: কটি লোকসভা আসন পাবে বঙ্গ?

নিজস্ব প্রতিবেদক,মানুষের মতামত:২০২৬ সালের পশ্চিমবঙ্গ ও অসমের বিধানসভা নির্বাচন শেষ হলেই দেশে শুরু হবে বহু প্রতীক্ষিত আসন পুনর্বিন্যাস বা ডিলিমিটেশনের কাজ। এটি ভারতের রাজনৈতিক মানচিত্রে একটি বড় পরিবর্তন আনতে চলেছে। ২০২৯ সালের লোকসভা নির্বাচন হবে নতুন আসন পুনর্বিন্যাস অনুযায়ী,যা দেশের নির্বাচনী চিত্রে বড়সড় রদবদল ঘটাতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আসনসংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে এবং বিভিন্ন রাজ্যের রাজনৈতিক গুরুত্বও পরিবর্তিত হতে পারে।

আসন পুনর্বিন্যাস কী এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?

ডিলিমিটেশন বা আসন পুনর্বিন্যাস হল লোকসভা ও বিধানসভা আসনগুলোর সীমানা পুনঃনির্ধারণের প্রক্রিয়া। এটি সাধারণত প্রতি কয়েক দশকে একবার করা হয়, যাতে জনসংখ্যার ভিত্তিতে ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা যায়। ভারতে সর্বশেষ ডিলিমিটেশন হয়েছিল ১৯৭৬ সালে, তবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে এই সীমারেখা অনেকটাই পুরনো হয়ে গেছে। ফলে নতুন করে আসন পুনর্বিন্যাসের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

কতটা বাড়তে পারে লোকসভা আসনের সংখ্যা?

বর্তমানে ভারতের লোকসভার মোট আসন সংখ্যা ৫৪৫, যার মধ্যে ৫৪৩ জন নির্বাচিত সদস্য এবং ২ জন মনোনীত সদস্য। নতুন ডিলিমিটেশন অনুসারে, লোকসভা আসনের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এটি বেড়ে ৮০০ থেকে ৯০০-র কাছাকাছি হতে পারে। এই বৃদ্ধি দেশের রাজনৈতিক ভারসাম্যে বড় পরিবর্তন আনতে পারে।

পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে কী পরিবর্তন হবে?

বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা আসন সংখ্যা ৪২। আসন্ন আসন পুনর্বিন্যাসের পর তা বেড়ে হতে পারে ৬৩। এটি পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ক্ষমতা আরও বাড়াবে এবং কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে রাজ্যের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

পশ্চিমবঙ্গ বর্তমানে লোকসভা আসন সংখ্যার নিরিখে উত্তর প্রদেশ ও মহারাষ্ট্রের পরেই তৃতীয় স্থানে রয়েছে। নতুন আসন পুনর্বিন্যাসের পরও এই অবস্থান বজায় থাকতে পারে। কারণ, রাজ্যের জনসংখ্যা এবং ভোটার সংখ্যার ভিত্তিতে আসন সংখ্যা নির্ধারিত হবে।

আসন পুনর্বিন্যাসের প্রভাব কী হবে?

১. রাজনৈতিক সমীকরণে পরিবর্তন: লোকসভা আসন সংখ্যা বাড়লে জাতীয় রাজনীতিতে পশ্চিমবঙ্গের ওজন আরও বাড়বে। যে দল পশ্চিমবঙ্গে ভালো করবে, তারা কেন্দ্রীয় সরকার গঠনে আরও বড় ভূমিকা নিতে পারবে।

2. নতুন রাজনৈতিক জোটের সম্ভাবনা: আসন সংখ্যা বাড়লে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নতুনভাবে নির্বাচনী কৌশল তৈরি করবে। রাজ্যে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ গঠিত হতে পারে।

3. সংসদে পূর্ব ভারতের গুরুত্ব বৃদ্ধি: পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, বিহার, ওডিশা-সহ পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর আসন সংখ্যা বাড়লে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে এই অঞ্চলের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

চ্যালেঞ্জ ও বিতর্ক

১. রাজনৈতিক আপত্তি: অনেক রাজ্য আসন পুনর্বিন্যাস নিয়ে আপত্তি তুলতে পারে, বিশেষ করে দক্ষিণ ও পূর্ব ভারতের কিছু রাজ্য, যেখানে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। তারা হয়তো দাবি তুলবে যে কেবল জনসংখ্যার ভিত্তিতে আসন সংখ্যা বাড়ানো উচিত নয়।

২. সীমানা নির্ধারণের জটিলতা: লোকসভা আসনের নতুন সীমানা নির্ধারণ করা সহজ কাজ নয়। অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিতে পারে।

৩. ভোটারদের প্রভাব: নতুন আসন বিন্যাসের ফলে কিছু এলাকায় ভোটারদের রাজনৈতিক পছন্দ ও সমর্থন পরিবর্তিত হতে পারে, যা রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।

২০২৯ সালের লোকসভা নির্বাচন ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় তৈরি করবে। আসন পুনর্বিন্যাসের ফলে পশ্চিমবঙ্গের লোকসভা আসন সংখ্যা বাড়লে রাজ্যটির জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্ব আরও বাড়বে। তবে এই পরিবর্তনের ফলে নতুন চ্যালেঞ্জও আসবে, যা রাজনৈতিক দলগুলোর কৌশলের ওপর নির্ভর করবে। আসন্ন ডিলিমিটেশন ভারতের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করতে পারে,তবে এটি সঠিক ভাবে বাস্তবায়ন করা জরুরি।

Share with

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *