জলদাপাড়া-গরুমারা জাতীয় উদ্যানে একশৃঙ্গ গন্ডারের সংখ্যা বেড়ে ৩৯২,সংরক্ষণে বড় সাফল্য
জিৎ দত্ত,মানুষের মতামত:জলদাপাড়া ও গরুমারা জাতীয় উদ্যানে একশৃঙ্গ গন্ডারের সংখ্যা বেড়ে ৩৯২-এ পৌঁছেছে, যা বিগত বছরগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি।২০১৯ সালের শেষ গণনায় এই সংখ্যা ছিল ২৮৯, যার মধ্যে জলদাপাড়ায় ছিল ২৩৭টি ও গরুমারায় ৫২টি। ২০১৩ সালে যেখানে গন্ডারের সংখ্যা ছিল ২২৯, সেখানে ২০২৫ সালের নতুন সেনসাস অনুযায়ী এটি বেড়ে ৩৯২-এ পৌঁছেছে। অর্থাৎ, ২০১৩ সালের পর থেকে ১৬৩টি গন্ডার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
রাজ্যের বনমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা জানিয়েছেন,
জলদাপাড়া এই মুহূর্তে সেই জাতীয় উদ্যান, যা এই মুহূর্তে কাজিরাঙ্গার পর ভারতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যায় গন্ডার রয়েছে। সেখানে এবারের গণনায় গন্ডারের সংখ্যা ৩২৭ থেকে ৩৩৪-এর মধ্যে ধরা পড়েছে। গড় সংখ্যা ধরা হয়েছে ৩৩১ (±৩)। অন্যদিকে, গরুমারা জাতীয় উদ্যানে ৫৮ থেকে ৬৩টি গন্ডার পাওয়া গেছে, যার গড় সংখ্যা ৬১ (±৩)।
জলদাপাড়ায় গন্ডার জনসংখ্যার মধ্যে ৭০-৭২ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক, ৮-৯ শতাংশ উপপ্রাপ্তবয়স্ক এবং ১৯-২১ শতাংশ বাচ্চা, যা ভবিষ্যতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির আশা জাগায়। এখানে প্রতি পুরুষ গন্ডারের বিপরীতে ১.১৩টি স্ত্রী গন্ডার রয়েছে।
গরুমারা জাতীয় উদ্যানে গন্ডারের জনসংখ্যার মধ্যে ৬০-৬২ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক, ১০-১২ শতাংশ উপপ্রাপ্তবয়স্ক এবং ২৬-২৮ শতাংশ বাচ্চা রয়েছে, যা একটি স্থিতিশীল বয়স কাঠামোর ইঙ্গিত দেয়। এখানে প্রতি পুরুষ গন্ডারের বিপরীতে ১.৫৯টি স্ত্রী গন্ডার রয়েছে।
রাজ্যের বনমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা বলেছেন, “রাজ্য সরকার সফল সংরক্ষণ উদ্যোগ, সঠিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা, বাসস্থান ব্যবস্থাপনা এবং শিকার বিরোধী পদক্ষেপের মাধ্যমে গন্ডার জনসংখ্যা স্থিতিশীল ও বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে।”
তিনি মনে করছেন,বিপন্ন তালিকাভুক্ত (IUCN Red List) গ্রেট ওয়ান-হর্নড রাইনোসরাস (Rhinoceros unicornis) সংরক্ষণের জন্য বিশেষ উদ্যোগ প্রয়োজন। এর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের দ্রুত এগিয়ে আসা উচিত।
২০২৫ সালের মার্চ মাসের ৫ ও ৬ তারিখে জলদাপাড়া, গরুমারা, চাপরামারি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও জলপাইগুড়ি রিজার্ভ ফরেস্টের নির্দিষ্ট অংশে গন্ডার গণনা পরিচালিত হয়। গণনার জন্য প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।
যথাযথ নির্ভুলতার জন্য, গন্ডার-অধিভুক্ত এলাকাগুলো ৪ বর্গ কিলোমিটার আকারের ব্লকে ভাগ করা হয় এবং নির্দিষ্ট পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র ও পর্যবেক্ষণ লাইন চিহ্নিত করা হয়। প্রতি দলে চারজন করে সদস্য পায়ে হেঁটে ও হাতির পিঠে চড়ে প্রতিটি ব্লক পর্যবেক্ষণ করেন। তারা গন্ডারের অবস্থান, লিঙ্গ, বয়স, শারীরিক বৈশিষ্ট্য, ছবি ইত্যাদি নথিভুক্ত করেন।
এই দুই দিনের গণনায় মোট ৬৩১ বনকর্মী অংশ নেন, যাদের সহায়তা করে ৮৫টি কুনকি হাতি। এছাড়া ১৫টি এনজিও ও নাগরিক সমাজ সংগঠন বন দফতরের সঙ্গে মিলে সফলভাবে এই গণনা পরিচালনা করে। এবার এই মিলিত কর্মকাণ্ড সফল হবে শেষ হয়েছে এবং তাতে দেখা গিয়েছে উত্তরবঙ্গে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে গন্ডারের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।