বিজেপিকে উজ্জীবিত করতেই মমতার পাড়ায় অফিস শুভেন্দুর?
নিজস্ব প্রতিবেদক,মানুষের মতামত:২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে,ততই রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়ছে পশ্চিমবঙ্গে।শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস যখন বুথ ম্যানেজমেন্ট ও সংগঠন মজবুত করতে নানা রণকৌশল নিচ্ছে,তখন প্রধান বিরোধী দল বিজেপি এখনও পর্যন্ত নিজেদের সংগঠনের ভিত শক্ত করতে ব্যর্থ।এখনও পর্যন্ত রাজ্য সভাপতি বদল নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি দল,যা কর্মীদের মধ্যে হতাশা তৈরি করছে।বিজেপির অন্দরে নতুন নেতৃত্ব নিয়ে জল্পনা থাকলেও,এক্ষেত্রে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের শীতল মনোভাবই স্পষ্ট হয়ে উঠছে।এর ফলে আগামী নির্বাচনে বিজেপির ভালো ফল করার সম্ভাবনা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ৭৭টি আসন পেলেও,সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের সাংগঠনিক শক্তি অনেকটাই দুর্বল হয়েছে। পরবর্তী সময়ে দল ভাঙন, সাংসদ-বিধায়কদের অসন্তোষ,সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং জনসংযোগের অভাবের কারণে বিজেপির ভিত অনেকটাই নরম হয়েছে। তারই মধ্যে নতুন রাজ্য সভাপতি বাছাই করা নিয়ে দলের মধ্যে দোলাচল চলেছে দীর্ঘদিন ধরে। সুকান্ত মজুমদারের নেতৃত্বে বিজেপি রাজ্য রাজনীতিতে খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারেনি, এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।তাই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নতুন রাজ্য সভাপতি খুঁজছেন,কিন্তু এখনো পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। এই দেরি দলের নীচুতলার কর্মীদের মধ্যে হতাশা বাড়াচ্ছে। বাংলার রাজনীতিতে লড়াই মূলত তৃণমূল বনাম বিজেপির মধ্যে হলেও,বাস্তবে ময়দানে তৃণমূলের সংগঠন অনেক বেশি মজবুত। তৃণমূল যেখানে বুথ স্তর থেকে ভোট কৌশল নির্ধারণ করছে,সেখানে বিজেপির সাংগঠনিক প্রস্তুতি বেশ পিছিয়ে।
রাজ্যের নেতৃত্বে শুভেন্দু অধিকারী যেমন একজন শক্তিশালী মুখ,তেমনই বিজেপির অন্যান্য গোষ্ঠীগুলিও নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে চাইছে। ফলে দলের মধ্যে নেতৃত্ব নিয়ে অসন্তোষ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।বিজেপির বড় সমস্যা হলো,তাদের কাছে এমন কোনো নেতা নেই যিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিকল্প হয়ে উঠতে পারেন। শুভেন্দু অধিকারী বিজেপির সবচেয়ে বড় মুখ হলেও,তিনি এখনো রাজ্যব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে পারেননি বলেই মত ওয়াকিবহাল মহলের।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য ভবানীপুরে নতুন অফিস তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছেন,যা রাজনৈতিকভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুরে বিজেপির উপস্থিতি শক্তিশালী করতে চাইছেন শুভেন্দু।তবে শুধুমাত্র ভবানীপুরেই সীমাবদ্ধ না থেকে বিজেপিকে রাজ্যব্যাপী সংগঠনে জোর দিতে হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে,ভবানীপুরে অফিস খোলার সিদ্ধান্ত ভালো হলেও, শুধুমাত্র একটি অঞ্চলে মনোনিবেশ করলে রাজ্যব্যাপী সংগঠন মজবুত হবে না।কারণ,বিধানসভা নির্বাচন জিততে হলে জেলায় জেলায় সংগঠন মজবুত করা জরুরি।২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে বিজেপি যেভাবে লড়াই করেছিল, এবার ততটা আক্রমণাত্মক মনোভাব দেখা যাচ্ছে না।এর ফলে প্রশ্ন উঠছে,২০২৬ সালে বিজেপির ফলাফল কেমন হবে?
২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ততই বোঝা যাচ্ছে যে বিজেপি এখনো সংগঠনের দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে। নতুন রাজ্য সভাপতির নাম ঘোষণা করতে দেরি হওয়ায় বিজেপির কর্মীরা মনোবল হারাচ্ছেন।শুভেন্দু অধিকারীর নতুন পরিকল্পনা ইতিবাচক হলেও,তা যথেষ্ট নয়। যদি বিজেপি সত্যিই বাংলার রাজনীতিতে বড় চ্যালেঞ্জ জানাতে চায়, তাহলে এখনই সংগঠন শক্তিশালী করতে হবে এবং নীচুতলার কর্মীদের উজ্জীবিত করতে হবে। না হলে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ফলাফল আরও খারাপ হতে পারে।