ভুতুড়ে ভোটার রুখতে এবারে সরাসরি মাঠে নেমে ব্যাট ধরছেন অভিষেক
নিজস্ব প্রতিবেদক,মানুষের মতামত:২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে তৃণমূল কংগ্রেস এবার বুথ ম্যানেজমেন্টে জোর দিচ্ছে। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আগামী শনিবার তৃণমূলের সর্বস্তরের নেতাদের নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করতে চলেছেন। ভার্চুয়াল মাধ্যমে এই বৈঠকে বুথ স্তরের সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর বিষয়ে আলোচনা হবে।
ভোটের আগে সংগঠন মজবুত করার চেষ্টা
বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে বুথ স্তরের সংগঠনকে মজবুত করার দিকে নজর দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। দল মনে করছে, ২০২৬-এর বিধানসভা ভোটে তাদের ১৫ বছরের শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার হাওয়া বইতে পারে। বিজেপিও তাদের সংগঠন শক্তিশালী করতে উঠেপড়ে লেগেছে। তাই শুধু প্রচার নয়, বুথ স্তরের সংগঠনকেও ঢেলে সাজানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে তৃণমূল নেতৃত্ব। সেই কারণেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন।
তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, ২০২১ সালের নির্বাচনে বুথ ম্যানেজমেন্টের কৌশল যথেষ্ট কার্যকর ছিল, কিন্তু পরবর্তী সময়ে পঞ্চায়েত ভোটের অভিজ্ঞতা এবং বিরোধীদের রাজনৈতিক কৌশল বিবেচনা করে নতুন পরিকল্পনা নেওয়া প্রয়োজন। তৃণমূলের অন্যতম শক্তি ছিল তার বুথ স্তরের সংগঠন, যা ২০১১ ও ২০১৬ সালের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। তবে এবার বিরোধীদের আক্রমণের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করছে দল।
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ এবং কোর কমিটি গঠন
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছিলেন যে, বিজেপি এবং নির্বাচন কমিশন একযোগে ভোটার তালিকায় ভূয়ো ভোটার ঢোকাচ্ছে। তিনি এই পরিস্থিতি সামলানোর জন্য একটি কোর কমিটি গঠন করেন। এই কোর কমিটির বৈঠক ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে এবং তারই পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে এবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বুথ স্তরের কৌশল নির্ধারণের জন্য সর্বস্তরের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন।
বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয়
এই বৈঠকে তৃণমূলের বুথ স্তরের সংগঠন কীভাবে আরও কার্যকর করা যায়, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। মূলত, কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হবে—
1. বুথ এজেন্টদের প্রশিক্ষণ: প্রতিটি বুথে নিযুক্ত এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, যাতে তারা ভোটের দিন এবং তার আগে সঠিকভাবে সংগঠন পরিচালনা করতে পারে।
2. ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ: বুথ স্তরের কর্মীদের দায়িত্ব দেওয়া হবে, যাতে তারা এলাকার ভোটারদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখে এবং সরকারী প্রকল্পগুলোর সুবিধা পৌঁছে দিতে সাহায্য করে।
3. বিরোধীদের কৌশলের মোকাবিলা: বিজেপির সম্ভাব্য রণকৌশল কী হতে পারে, তা বিশ্লেষণ করে তার প্রতিরোধ গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হবে।
4. ইভিএম এবং নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা: দল মনে করছে, বিরোধীরা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে, তাই ইভিএম সংক্রান্ত যে কোনও বিষয়েও বিশেষ নজর দেওয়া হবে।
দলীয় সংগঠনে পরিবর্তন ও নতুন কৌশল
বুথ স্তরের সংগঠনে কিছু পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছে, পুরোনো কৌশল কিছুটা বদল করে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে আরও উন্নত বুথ ম্যানেজমেন্ট গড়ে তুলতে হবে। সামাজিক মাধ্যমে প্রচার, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি, বুথ ভিত্তিক মাইক্রো ক্যাম্পেইন চালানোর মতো বিষয়গুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।
২০২১ সালের নির্বাচনে বিজেপি শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হিসেবে উঠে এলেও তৃণমূল কংগ্রেস বুথ স্তরের সংগঠনের জোরেই জয়ী হয়েছিল। এবার সেই সংগঠনকে আরও মজবুত করতে চাইছে দল। তাই দোল উৎসবের পরদিনই এই বৈঠক ডাকা হয়েছে, যাতে দলের কর্মীরা আগেভাগেই প্রস্তুতি নিতে পারেন।
ভোট যুদ্ধের আগে সংগঠনের ভিত শক্ত করার পরিকল্পনা
বুথ স্তরের সংগঠন রাজনৈতিক লড়াইয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। বিরোধীরা যখন নিজেদের সংগঠন মজবুত করার চেষ্টা করছে, তখন তৃণমূলও পিছিয়ে থাকতে রাজি নয়। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই বৈঠকের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে চাইছেন, যাতে বুথ স্তর থেকেই সংগঠন শক্তিশালী হয় এবং তৃণমূলের ভোটব্যাংক অটুট থাকে।
২০২৬ সালের ভোটযুদ্ধে জয় পেতে তৃণমূল কংগ্রেস এখন থেকেই রণকৌশল ঠিক করছে। বিরোধীদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে এবং ভোটের ময়দানে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।