বিধানসভা ভোটের আগে শুদ্ধিকরণ তৃণমূলের, দুর্নীতিতে ‘নো কম্প্রোমাইজ’
জিৎ দত্ত,মানুষের মতামত:বছর ঘুরলেই বিধানসভা নির্বাচন। বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে রাজ্যের শাসক দলের। ভোটের আগে দলের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ রাখতে জনসংযোগে জোর দেওয়ার কথা বলেছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে শাসক দলের ছোট বড় ও মাঝারি নেতাদের মধ্যে আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও বিভিন্ন বিতর্কে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে বারবার অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে দলকে। এই অবস্থায় কঠোর পদক্ষেপ নিতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলের অবস্থান একরকম স্পষ্ট। দুর্নীতি প্রশ্নে কোন আপোষ নয়।
সম্প্রতি বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে পুর এবং আবাসন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠছে। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট হয়েছে পুরসভা এবং আবাসন দুর্নীতি নিয়ে কোনও রকম আপস করা হবে না। সূত্রের খবর, তৃণমূল নেতৃত্ব স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে— দুর্নীতিতে যুক্ত থাকলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে, পুলিশ এবং প্রশাসনকে এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক রং না দেখে পদক্ষেপ নিতে বলা হবে।
গত কয়েক বছরে আবাসন প্রকল্পের অনিয়ম নিয়ে একের পর এক অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন স্তরে স্বজনপোষণ থেকে শুরু করে কাটমানির অভিযোগ পর্যন্ত উঠেছে, যার জেরে বহু নেতা-কর্মীর নামও জড়িয়েছে। বিরোধীরা ইতিমধ্যেই এই ইস্যুকে হাতিয়ার করে মাঠে নেমেছে। তাই, ভোটের আগে কোনও দুর্নীতির অভিযোগ যেন দলের বিপক্ষে না যায়, তা নিশ্চিত করতেই এখন থেকেই দলের শুদ্ধিকরণ অভিযান শুরু করতে চাইছে তৃণমূল।
কলকাতা পুরসভা এলাকায় বেআইনি পার্কিংয়ের বিরুদ্ধেও কড়া বার্তা
শহরজুড়ে বেআইনি পার্কিং নিয়ে লাগাতার অভিযোগ আসছে। পুরসভা এলাকায় বেআইনি পার্কিং বন্ধ করতে কড়া অবস্থান নিচ্ছে তৃণমূল নেতৃত্ব। সূত্রের খবর, সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে দলের প্রবীণ নেতা সুব্রত বক্সী স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, বেআইনি পার্কিং রুখতে ব্যবস্থা নিতে হবে।
এই নিয়ে দিন কয়েক আগে ভবানীপুর বিধানসভার বন্দর এলাকার পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে বসেন সুব্রত বক্সী, অরূপ বিশ্বাস এবং কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। নেতাজি ইন্ডোরে দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তার পর থেকেই ভোটার তালিকা পর্যালোচনা এবং সম্ভাব্য দুর্নীতির তদন্তে নামছে দলের শীর্ষ নেতারা। সেখানে এই বৈঠকে বাড়তি গুরুত্ব পেয়েছে দুর্নীতির প্রশ্নটি। তবে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে ভোটার তালিকা শুদ্ধিকরণের বিষয়টিকে।
ভোটার তালিকা বিশুদ্ধিকরণের বিশেষ কমিটি
দলের তরফে রাজ্য স্তরে ইতিমধ্যেই ভোটার তালিকা পর্যালোচনা করতেও বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন সুব্রত বক্সী, সঙ্গে রয়েছেন দলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পার্থ ভৌমিকের মতো গুরুত্বপূর্ণ নেতারা। প্রতিটি জেলা ধরে ভোটার তালিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে সব জেলার রিপোর্ট জমা পড়বে তৃণমূল ভবনে। জানা গিয়েছে এরপর সেই রিপোর্ট নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনার পর তার জমা পড়বে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে জমা পড়বে। একইসঙ্গে প্রত্যেক জেলা থেকেই দলীয় নেতৃত্বে কাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তা নিয়েও একটি রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। এই বিষয়টা নিয়েও দলনেত্রীর সঙ্গে আলোচনা করবে তৃণমূল শিশু নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেসের এক শীর্ষ স্থানীয় নেতার কথায়, নির্বাচন যখনি হোক শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এখন থেকেই নির্বাচনের ময়দানে প্রস্তুত রয়েছে। এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে স্বচ্ছ ভাব মূর্তির উপর। এক্ষেত্রে যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে সেই বিষয়গুলিও খতিয়ে দেখছে দল। পরবর্তীতে সবটা পর্যালোচনা করি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে খবর।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিরোধীরা যাতে দুর্নীতি ইস্যুতে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে না পারে, তা নিশ্চিত করতেই আগেভাগে পদক্ষেপ নিচ্ছে তৃণমূল। বিধানসভা ভোটের আগে দলের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ রাখতে এবং দুর্নীতির অভিযোগ এড়াতে শাসকদল যে কঠোর অবস্থান নিতে চলেছে, তা একপ্রকার স্পষ্ট।