ভোটমুখী রাজ্য বাজেট: মাস্টারস্ট্রোক দিতে তৈরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
স্টাফ রিপোর্টার,মানুষের মতামত:পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে,২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের জন্য রাজ্য বাজেট পেশের দিনক্ষণ ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১২ ফেব্রুয়ারি বিধানসভায় এই বাজেট পেশ হবে।নবান্ন সূত্রে জানা গেছে,এবারের বাজেটের মূল লক্ষ্য রাজ্যের সাধারণ মানুষকে খুশি করা এবং ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে তৃণমূল কংগ্রেসের অবস্থান আরও মজবুত করা।
ভোটমুখী বাজেটের সম্ভাবনা
২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এটিই শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট। ফলে একে ভোটমুখী বাজেট হিসেবেই দেখছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। নবান্নের একটি অংশ মনে করছে, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, এবং লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতো জনমুখী প্রকল্পগুলিতে বরাদ্দ বাড়ানোর ঘোষণা আসতে পারে।
লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে বর্তমানে সাধারণ শ্রেণির মহিলারা ১০০০ টাকা এবং তফসিলি জাতি ও উপজাতি শ্রেণির মহিলারা ১২০০ টাকা করে মাসিক আর্থিক সহায়তা পান। এবার এই পরিমাণ যথাক্রমে ১৫০০ এবং ১৭০০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব রাখা হতে পারে।
সরকারি কর্মচারীদের জন্য সুখবর?
রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) বৃদ্ধির দাবি দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা একটি ইস্যু। কর্মচারী সংগঠনগুলির চাপের মুখে এবারের বাজেটে ৩-৪ শতাংশ ডিএ বৃদ্ধির ঘোষণা হতে পারে বলে জল্পনা। যদিও এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি, তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ তৃণমূল সরকারের জনপ্রিয়তা বাড়াতে সহায়ক হবে।
কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়নে বিশেষ জোর
পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখতে কৃষি এবং গ্রামীণ উন্নয়নে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে। কৃষকদের জন্য নয়া ঋণ মুকুব প্রকল্প কিংবা নতুন কৃষি ভর্তুকি ঘোষণা করার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে শুরু হওয়া গ্রামীণ সড়ক এবং জল প্রকল্পগুলিতে বাড়তি বরাদ্দ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান
বাজেটে পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্যও বিশেষ পরিকল্পনা থাকতে পারে। রাজ্যের বেকার যুবকদের জন্য নতুন প্রশিক্ষণ প্রকল্প বা স্টার্টআপ সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে। মমতা সরকারের ‘দুয়ারে সরকার’ এবং ‘পাড়ায় সমাধান’ কর্মসূচির সফলতাকে আরও বড় মঞ্চে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকতে পারে এবারের বাজেটে।
অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে ভোটমুখী বাজেট
যদিও রাজ্যের ঋণের বোঝা ক্রমেই বাড়ছে, তার পরেও রাজ্য সরকার জনমুখী প্রকল্পে ব্যয় করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। রাজনৈতিক মহলের মতে, বাজেটের মাধ্যমে ভোটারদের সরাসরি আর্থিক সুবিধা দিয়ে তাদের সমর্থন পাওয়ার কৌশল নিতে পারে মমতা সরকার। বিশেষ করে, নারী এবং গ্রামীণ ভোটব্যাঙ্কের ওপর আলাদা নজর দেওয়া হতে পারে।
রাজনৈতিক প্রভাব
বাজেটের ঘোষণা রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি রাজ্যের আর্থিক সংকট এবং সরকারের ‘অপব্যয়’-এর বিষয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লক্ষ্য থাকবে জনসাধারণের মধ্যে জনপ্রিয়তা বজায় রাখা এবং ২০২৬-এর ভোটে তৃণমূলের অবস্থান আরও শক্তিশালী করা।
১২ ফেব্রুয়ারির বাজেট অধিবেশনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী পরিকল্পনা নিয়ে আসেন, তা নিয়ে শুধু রাজ্যের মানুষই নয়, বিরোধীরাও নজর রাখছে। কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতো প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ানোর সম্ভাবনা এবং সরকারি কর্মচারীদের ডিএ বৃদ্ধির সম্ভাবনা নিয়ে ইতিমধ্যেই উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। এবার দেখার, এই বাজেট কি মমতার জন্য এক কার্যকরী ‘মাস্টারস্ট্রোক’ হয়ে উঠতে পারে কিনা।