নওশাদ সিদ্দিকীকে ‘জঙ্গি-নেতা’ বলে আক্রমণ, ভাঙড়ের রাজনীতিতে শওকত মোল্লা ও নওশাদের তীব্র বাকযুদ্ধ
স্টাফ রিপোর্টার,মানুষের মতামত:সম্প্রতি ভাঙড়ের রাজনীতিতে উত্তপ্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক শওকত মোল্লা এবং ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ) একমাত্র বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকীর মধ্যে। শওকত মোল্লা নওশাদকে ‘জঙ্গি’ বলে আক্রমণ করেছেন,যা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এই বক্তব্যের জেরে তৃণমূল এবং আইএসএফের মধ্যে রাজনৈতিক সংঘাত আরও প্রকট হয়েছে।তবে নওশাদের মতো পরিশীলিত,ভদ্র এবং মিষ্টভাষী যুবা রাজনীতিক কে এভাবে শওকতের আক্রমণকে ভালোভাবে দেখছে না বাংলার রাজনৈতিক মহল ।
শওকত মোল্লার বক্তব্য
তৃণমূল বিধায়ক শওকত মোল্লা সম্প্রতি একটি জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে নওশাদ সিদ্দিকীকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, “ভাঙড়ের মানুষের শান্তি নষ্ট করার জন্য কিছু জঙ্গি শক্তি সক্রিয়। নওশাদ সিদ্দিকী তাদের নেতা।” শওকতের এই মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। শওকত আরও অভিযোগ করেন, নওশাদ এবং তার দল ভাঙড়ের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করছে এবং ভাঙড়ে অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে।
শওকত মোল্লার বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে আইএসএফ একটি ‘উগ্রপন্থী’ দল, যারা জনগণের স্বার্থের বদলে রাজনীতির নামে বিভাজনের রাজনীতি করছে। তিনি দাবি করেন,তৃণমূল কংগ্রেস মানুষের উন্নয়ন এবং শান্তি রক্ষায় কাজ করে চলেছে, কিন্তু নওশাদের মতো নেতারা সেই প্রয়াসকে বাধাগ্রস্ত করছে।
নওশাদ সিদ্দিকীর প্রতিক্রিয়া
শওকতের এই বক্তব্যের পাল্টা জবাবে আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকীও সরব হয়েছেন। তিনি স্পষ্টতই বলেন, “তৃণমূল নেতারা জনসমর্থন হারিয়ে এখন অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছেন। আমার বিরুদ্ধে ‘জঙ্গি’ শব্দটি ব্যবহার করে তারা প্রমাণ করেছে যে, তারা বিরোধীদের প্রতি কতটা অসহিষ্ণু।”
নওশাদ দাবি করেন, তার দল আইএসএফ মূলত দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য লড়াই করছে। তিনি “মানুষের মতামত”- কে বলেন “আমি একজন বিধায়ক হিসেবে জনগণের অধিকারের কথা বলি। যারা মানুষের উন্নয়নের কথা বলে না, তারাই আমাকে জঙ্গি বলে অপবাদ দিচ্ছে।” তিনি শওকত মোল্লার এই মন্তব্যকে তৃণমূলের রাজনৈতিক কৌশলের অংশ বলে অভিহিত করেন এবং বলেন, “এই ধরনের বক্তব্য দিয়ে তৃণমূল ভাঙড়ের মানুষের মনোযোগ সরিয়ে রাখতে চাইছে।”
ভাঙড়ের রাজনীতির প্রেক্ষাপট
ভাঙড় বরাবরই পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মানচিত্রে একটি সংবেদনশীল এলাকা। এখানে একাধিক রাজনৈতিক দল সক্রিয়,বিশেষত তৃণমূল কংগ্রেস এবং সম্প্রতি গঠিত আইএসএফ। নওশাদ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আইএসএফ এখানে একটি শক্তিশালী বিরোধী শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে। তাদের প্রধান দাবি,স্থানীয় মানুষের অধিকার এবং ভূমি রক্ষার লড়াই। অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসও ভাঙড়ে নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে মরিয়া।
রাজনৈতিক বিশ্লেষণ
বিশ্লেষকদের মতে, শওকত মোল্লার বক্তব্যে তৃণমূলের ক্রমশ বাড়তে থাকা চাপের প্রতিফলন রয়েছে। ভাঙড়ে আইএসএফের ক্রমবর্ধমান প্রভাব তৃণমূলের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে, নওশাদের ‘জঙ্গি’ আখ্যা পাওয়ার মতো বিতর্কিত মন্তব্য বিরোধীদের একত্রিত হওয়ার সুযোগ করে দিতে পারে।
শওকত মোল্লা এবং নওশাদ সিদ্দিকীর এই বিতর্ক শুধুমাত্র ব্যক্তি আক্রমণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং ভাঙড়ের রাজনীতির ভবিষ্যত দিক নির্দেশক। তৃণমূল এবং আইএসএফের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংঘাত কীভাবে এই অঞ্চলের রাজনৈতিক ভারসাম্যকে প্রভাবিত করবে, তা সময়ই বলবে। তবে এই বিতর্ক সাধারণ মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়িয়ে তুলেছে এবং ভাঙড়ে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে।