Feature NewsNews

পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির নতুন সভাপতি কে? ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনের আগে নেতৃত্ব নিয়ে দোলাচল গেরুয়া শিবির

নিবারণ চক্রবর্তী

পশ্চিমবঙ্গে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে বিজেপি শিবিরে এক বড় প্রশ্ন চর্চার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে—কে হবেন রাজ্য বিজেপির নতুন সভাপতি? এই পদ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হওয়ায় দলের মধ্যে তৈরি হয়েছে অস্থিরতা। নেতৃত্বের এই প্রশ্ন একদিকে যেমন দলীয় কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করছে, তেমনি নির্বাচনী প্রস্তুতিতেও প্রভাব ফেলছে। বর্তমানে দেশজুড়ে বিজেপির সদস্য সংগ্রহ অভিযান চলছে। সভাপতি বদলের খবরে এই সদস্য সংগ্রহ অভিযানেও প্রভাব পড়েছে বলেই মনে করছেন রাজ্য বিজেপির একাংশ নেতারা। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে পরাজিত হওয়ার পর থেকেই পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সংগঠন দুর্বল হয়ে পড়েছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব রাজ্যে দলের পুনর্গঠন এবং শক্তিশালী সাংগঠনিক ভিত্তি গড়ে তোলার জন্য নতুন নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সভাপতির নাম চূড়ান্ত না হওয়ায় দলীয় কর্মীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।

রাজ্যে সভাপতির পদ শুধুমাত্র একটি সাংগঠনিক দায়িত্ব নয়, বরং এটি তৃণমূলের মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বিজেপির রাজনৈতিক লড়াইয়ের মুখ হয়ে উঠবে। তাই দলের অভ্যন্তরে নতুন সভাপতির গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। বর্তমানে রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। তাকে পশ্চিমবঙ্গের সংগঠন দেখার পাশাপাশি নিজের মন্ত্রকের কাজ দেখতে হচ্ছে। তাই পূর্ণ সময়ের সভাপতি না থাকায় সমস্যা বাড়ছে। নতুন সভাপতির পদে যেসব নেতার নাম উঠে এসেছে, তাদের মধ্যে আছেন প্রাক্তন এবং বর্তমান সাংসদ, রাজ্যের প্রভাবশালী নেতারা এবং সংগঠনের কাজের অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা। শুভেন্দু অধিকারী, যিনি বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা, এই দৌড়ে অন্যতম সম্ভাব্য নাম। তবে অনেকেই মনে করছেন যে শুভেন্দুকে বিরোধী দলনেতার দায়িত্বে রেখে অন্য কাউকে সভাপতি পদে বসানো হতে পারে।

অন্যদিকে, দিলীপ ঘোষের অভিজ্ঞতা এবং সুকান্ত মজুমদারের বর্তমান ভূমিকার উপরও নজর রাখছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। যদিও দিলীপ ঘোষ সভাপতি পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন, তার প্রভাব এখনও রাজ্য বিজেপির মধ্যে দৃশ্যমান। পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সভাপতির নির্বাচন মূলত কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপর নির্ভরশীল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নির্দেশনায় এই নির্বাচন হবে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এমন একজনকে বেছে নিতে চাইছে, যিনি একদিকে কর্মীদের উজ্জীবিত করতে পারবেন এবং অন্যদিকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে লড়াই করতে সক্ষম হবেন।তবে রাজ্যে নেতৃত্ব নিয়ে দোলাচল এবং দেরি দলের অভ্যন্তরে একটি অস্থির পরিবেশ তৈরি করেছে। এই পরিস্থিতি বিরোধী শিবিরকে তাদের কৌশল তৈরিতে আরও সুবিধা করে দিচ্ছে।

 

২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির মূল লক্ষ্য থাকবে তৃণমূল কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটিগুলিতে প্রবেশ করা এবং গ্রামীণ এলাকাগুলিতে ভোটের শেয়ার বাড়ানো। এর পাশাপাশি, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনকেও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে, কারণ তার ফলাফল ২০২৬ সালের প্রস্তুতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। নতুন সভাপতির নেতৃত্বে দলের সাংগঠনিক পুনর্গঠন, কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করা, এবং রাজ্যের ভোটারদের কাছে বিজেপির বার্তা সঠিকভাবে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা গড়ে তোলা হবে। কিন্তু নেতৃত্ব নিয়ে দোলাচল চলতে থাকলে এই প্রস্তুতিতে বড় ক্ষতি হতে পারে।

২০১৮-২০২১ সাল পর্যন্ত বিজেপির কেন্দ্র নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় এবং মুকুল রায় সংগঠনকে ঢেলে সাজানো থেকে শুরু করে কিভাবে নির্বাচনে ভালো ফল করা যায় সেদিকে নজর রেখে কাজ করতেন। কিন্তু একুশের পরাজয়ের পর তৃণমূলে ফিরে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন মুকুল। আর কৈলাস নিজের রাজ্যে ফিরে মধ্যপ্রদেশ মন্ত্রিসভার অন্যতম সদস্য হিসেবে কাজ করছেন। কৈলাসের বদলে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বে রয়েছেন দুজন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা। প্রথমজন উত্তর প্রদেশের সুনীল বনশল, দ্বিতীয়জন বিহারের মন্ত্রী মঙ্গল পান্ডে। কৈলাস যেভাবে দিনের পর দিন বাংলার বিভিন্ন জেলায় গিয়ে সংগঠনের কাজ সামনে ছিলেন, এই দুই নেতার মধ্যে তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায় না বলেই জানাচ্ছে বিজেপির একটি সূত্র। এমতাবস্থায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উদাসীনতা সঙ্গে নেতৃত্ব ঠিক না করতে পারার বিষয়টি বিজেপিকে যথেষ্ট ভোগাবে বলেই মনে করছে বাংলার রাজনৈতিক মহল।
পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির নতুন সভাপতির নাম ঘোষণা করা দলের ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে। কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে একজন শক্তিশালী নেতা বেছে নেওয়ার প্রক্রিয়া যত দ্রুত সম্পন্ন হবে, ততই দলীয় কর্মীরা নির্বাচনী প্রস্তুতিতে মনোনিবেশ করতে পারবেন। তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য একটি সুসংহত এবং শক্তিশালী নেতৃত্বই বিজেপির সাফল্যের চাবিকাঠি হতে পারে।

Share with

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *