জ্যোতি বাবু থেকে মমতা, বাংলার মুখ্যমন্ত্রীদের কাছে বরাবরই প্রিয় সেন্ট জেমস কোর্ট
জিৎ দত্ত,মানুষের মতামত:ইতিহাস এবং ঐতিহ্য দেখলে এই হোটেলের সঙ্গে যোগ রয়েছে ইংল্যান্ডের রানী এলিজাবেতে প্রথম দরবারের। তারপর টেমস দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে। গত ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে সেন্ট জেমস কোর্ট বিশ্ববরেণ্য রাজ নেতাদের স্বাগত জানিয়ে এসেছে। জানলে অবাক হতে হয় যে সেই ইতিহাসের সামান্য হলেও জায়গা রয়েছে এই বাংলার। বিলেত ফেরত বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতিবাবু থেকে শুরু করে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী সকলের কাছেই সেন্ট জেমস কোর্ট যেন পছন্দের আসিয়ানা।
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রবিবার ছয় দিনের সফরে লন্ডনে পৌঁছেছেন। এই সময় তিনি সেন্ট্রাল লন্ডনের ঐতিহ্যবাহী হোটেল সেন্ট জেমস কোর্ট-এ থাকছেন। এই বিলাসবহুল হোটেলটি তাজ গ্রুপের অন্তর্গত এবং এর ইতিহাস একশো বছরেরও বেশি পুরনো। এলিজাবেথ যুগের অভিজাতদের পছন্দের তালিকায় থাকা এই হোটেলটি তাই তাই তাঁর একসময়কার প্রবল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ জ্যোতি বসুর কাছেও ছিল খুব প্রিয়।
তথ্য বলছে, গত শতকের ৮ ও ৯ দশকে দশকে প্রশাসনিক ব্যস্ততা এড়িয়ে গ্রীষ্ম অবকাশে বিলেত সফরে তিনি থাকতেন এই ঐতিহ্যবাহী সেন্ট জেমস কোর্টেই। যদিও সে সময় তা থাকতো তার নিতান্তই ব্যক্তিগত অবসর কাটানোর সময়। এই সময় কোনো সরকারি কর্মসূচি রাখতেন না তিনি। আগেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লন্ডন শহরে এসেছিলেন, সে সময়ও তিনি এই সেন্ট জেমস কোর্টেই উঠেছিলেন। এবারও লন্ডনে তার ঠিকানা সেই পুরনো সেন্ট জেমস কোর্ট।প্রসঙ্গত, শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা জ্যোতি বসু নন, এই ঐতিহ্যবাহী হোটেলে অতীতে নেলসন ম্যান্ডেলা, মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র, প্রিন্সেস ডায়ানা, প্রিন্স হ্যারি, ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি কে আর নারায়ণন-সহ বিশ্বখ্যাত অনেক নেতা অবস্থান করেছেন।
তথ্য বলছে, আজকের এই পাঁচতারা হোটেলের ইতিহাস সরাসরি ইংল্যান্ডের রাজ পরিবারের সঙ্গে যুক্ত। এবং তা কয়েকশো বছরের পুরনো।সেন্ট জেমস কোর্টের ইতিহাস টিউডর যুগের ইংল্যান্ড এবং রানি এলিজাবেথ প্রথমের দরবারের সঙ্গে জড়িত। সেই সময় এক অভিজাত জমিদার ও রানির কোষাধ্যক্ষ লর্ড ড্যাকার ওয়েস্টমিনস্টারের ‘টোথিল ফিল্ডস’-এ একটি ভিক্ষাশ্রম তৈরির পরিকল্পনা করেন। পরে এখানে ইমানুয়েল ভিক্ষাশ্রম নামে ছোট ছোট কটেজ তৈরি করা হয়, যেখানে ২০ জন সুবিধাবঞ্চিত শিশু আশ্রয় ও শিক্ষার সুযোগ পেত।১৮৯৭ সালে রাজকীয় প্রকৌশলী বাহিনীতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী জার পাভলে এই জায়গাটি অধিগ্রহণ করেন। এখানেই বর্তমানে দুইটি তাজ হোটেল তাজ ৫১ বাকিংহাম গেট স্যুইটস অ্যান্ড রেসিডেন্সেস এবং সেন্ট জেমস কোর্ট, এ তাজ হোটেল দাঁড়িয়ে আছে। ১৯৮২ সালে ইন্ডিয়ান হোটেলস কোম্পানি লিমিটেড অর্থাৎ তাজ হোটেলস রিসর্টস অ্যান্ড প্যালেসেস এই হোটেলটি অধিগ্রহণ করে।যে কদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিলেতে রয়েছেন বাংলার মানুষের চোখ কিন্তু রয়েছে এই সেন্ট জেমস কোর্টের দিকেই।