NewsPolitics

বাংলা সহ দেশের অন্যান্য নির্বাচনের জন্য কি রোড ম্যাপ বিজেপির?

দিলীপ চট্টোপাধ্যায়,মানুষের মতামত:বাংলায় ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে রণকৌশল তৈরি করে পথে বিজেপির নেতারা। শুধু দিল্লিতে অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে রাজনৈতিক ভাবে কোণঠাসা করাই নয়, এখন থেকেই বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব ২০২৮ সাল পর্যন্ত নির্বাচনী যুদ্ধের রোড ম্যাপ তৈরি করে ফেলল। দিল্লি জয়ের পর এবার ২৫-র নভেম্বরে বিহার বিধানসভা নির্বাচন জিততেও আগাম কৌশল ও সাংগঠনিক প্রস্তুতি তৈরি করে ফেলেছে গেরুয়া শিবির। নীতিশ কুমারকে জোটের মুখ্যমন্ত্রীর মুখ করেই বিহারে লড়তে চলেছে গেরুয়া শিবিরের নেতারা।

বিহারে কুর্মি, দলিত, মহা দলিত ও ওবিসির বড় অংশকে এন ডি এ জোটের তলায় আনতে চাইছে বিজেপি। লালুপ্রসাদ যাদবের যাদব-মুসলিম জাতিগত সমীকরণকে মোকাবিলা করতে তাই এন ডি এ ও সামাজিক জোটে জোর দিচ্ছে। এই লক্ষ্যে তারা এখনই অনেকটাই সফল বলেই মনে করা হচ্ছে। বিজেপির কাছে তাই নীতিশ কুমার, চিরাগ পাসোয়ান, জিতন রাম মাঝিদের এত গুরুত্ব। বিহারে ক্ষমতা ধরে রাখার পাশে নীতিশ কুমারকেই আবার মুখ্যমন্ত্রীত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিজেপি ঘুঁটি সাজানো শুরু করেছে। প্রাক নির্বাচনী মুহুর্ত্যে নীতিশের পালটি খাওয়ার সম্ভাবনা কম।

বিজেপির শীর্ষ নেতারা তাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক চালিকা শক্তি আর এস এস নেতাদের উপদেশ মেনেই রাজ্যে রাজ্যে ঘুটি সাজাতে নেমেছেন। এর মধ্যে বিজেপির সাংগঠনিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে মেরে ফেলতে চাইছে। ২৯-এর পরবর্তী লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত তাই বিজেপি নিজেদের রাজনৈতিক-সাংগঠনিক রোড ম্যাপ তৈরি করে নিতে চাইছেন । মোদী পরামর্শ, অমিত শাহ-নাড্ডাদের সক্রিয়তায় আর এই লক্ষ্যেই রাজ্যে –রাজ্যে নির্বাচনী কৌশল কি হবে কোন কৌশল নেওয়া হবে তার তোড়জোড় শুরু গেরুয়া শিবিরের অন্দরে। বিহার জয় নিয়ে আত্মবিশ্বাসী গেরুয়া শিবির।

কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইন্ডিয়া জোটের কাছে ঝাড়খন্ডে হারলেও, প্রথমে হরিয়ানা পরে সম্প্রতি মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে আস্থা ফিরেছে গেরুয়া শিবিরের। বিশেষ করে মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস – এন সি পি, উদ্ধবের শিবসেনার শোচনীয় হারে ডামাডোল বেঁধেছে কংগ্রেসের নেতৃত্বের ইন্ডিয়া জোটেই । তাতেই প্রবল স্বস্তিতে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। বিশেষ করে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহরা। দিল্লি জয়ের উদ্দীপনা বেড়েছে বিজেপিতে।

এবার বিজেপির চালিকাশক্তি আর এস এসের পরামর্শে ২০২৫ ও ২০২৬ সালের ৬ রাজ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে এখন থেকেই নানা কৌশল নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে গেরুয়া শিবির। এখন উত্তর প্রদেশ থেকে ত্রিপুরার কৌশলও সাজানো হচ্ছে। নাড্ডা এ নিয়ে অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক সেরেছেন। নরেন্দ্র মোদীকেও অমিত শাহ ৬ রাজ্যে প্রচার-জনসংযোগ ও নির্বাচনী সংগঠনের প্রস্তুতি নিয়ে মৌখিক ভাবে জানিয়েছেন। বিজেপির প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল দিল্লির বিধানসভা নির্বাচন।

যে ৬ রাজ্যে নির্বাচন নিয়ে বিজেপি এখন থেকেই তৎপরতার মধ্যে বিহার ও অসমেই বিজেপিও তার জোট সঙ্গীরা ক্ষমতাসীন। অন্যদিকে, কেরালা, তামিলনাড়ু ও পশ্চিমবঙ্গে

বিজেপি বিরোধীদলগুলি ক্ষমতায় রয়েছে। দিল্লিতে বারবার মোদী-শাহদের নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে। দিল্লিতে ২৬ বছর বাদে ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের পর মোদী-শাহ-নাড্ডাদের আরো আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। বিহার, অসমে আবার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনে গেরুয়া শিবিরে আত্মবিশ্বাস এখন তুঙ্গে। তবে চিন্তা বাড়ছে পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে। এখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সোষ্যাল ইঞ্জিনীয়ারিং’ এবং নানা সামাজিক, আর্থিক প্রকল্পর প্রভাবে যে রাজ্যে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা পেছনের সারিতে চলে যাচ্ছে তা নিয়ে দলের অন্দরে বিজেপি নেতাদের উদ্বেগই বাড়ছে।

এর উপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার রাজনৈতিক সহযোগীরা যে ভাবে অতি দ্রুত বিজেপির নেতা-জন প্রতিনিধিদের ভাঙ্গিয়ে ২৬-এর আগে পাল্টা চাপ তৈরি করছেন তাতে পশ্চিমবঙ্গ যে বিজেপির কঠিন ঠাই তা একান্তে কবুল করছেন গেরুয়া শিবিরের রাজনৈতিক কৌশলবিদ ও তাদের একাধিক পরামর্শদাতা সংস্থা। পশ্চিমবঙ্গে পরিস্থিতি বদল না হলে যে ২৬-এও বিজেপিকে খালি হাতে ফিরতে হবে তা বুঝতে পারছেন স্বয়ং নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ, নাড্ডারা।

দক্ষিণে কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা ছাড়া বাকি রাজ্যে তৃণমূল স্তরে সাংগঠনিজ ভাবে দূর্বল ও হিন্দি বলয়ের হিন্দু পার্টি হিসাবে চিহ্নিত বিজেপি কেরালা, তামিলনাড়ুতে ভোটের শতাংশ, আসন পাওয়া ছাড়া অন্য কোন ভাবনায় নেই। তামিলনাড়ুতে প্রয়াতা জয়ললিতার এ আই এ ডি এম কের সঙ্গে জোটের আপ্রাণ চেষ্টায় রয়েছে বিজেপি। জোট না হলে তাকে একলা চলতে হবে। কমিউনিষ্ট-কংগ্রেসের বাইপোলার কেরালায় হিন্দুত্ব অস্ত্রে তৃতীয় শক্তি হতে চায় বিজেপি। এজন্য তাদের ভোটের শতাংশ বাড়িয়ে ১০-১২ শতাংশ ও বিধানসভায় ২-৫ আসন আসন জেতার লক্ষ্যই রেখেছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

Share with

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *