NewsPoliticsPublic Interest News

 “লোকসভা ভেঙে সারা দেশে একসঙ্গে হোক বিশেষ নিবিড় সংশোধন”

বিপ্লব চক্রবর্তী,মানুষের মতামত:ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন (Special Intensive Revision – SIR) চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু এরই মধ্যে শর্তসাপেক্ষে এই প্রক্রিয়াকে সমর্থন করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ও লোকসভার দলনেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, “বাংলায় সংশোধন করতে আপত্তি নেই, কিন্তু তার আগে বর্তমান লোকসভা ভেঙে দিয়ে সারা দেশে একসঙ্গে এই সংশোধন প্রক্রিয়া চালাতে হবে।”

অভিষেকের যুক্তি,মাত্র এক বছর আগে লোকসভা ভোট হয়েছে এই একই ভোটার তালিকার ভিত্তিতে। তখন তালিকা সঠিক ছিল,এখন বাংলার ক্ষেত্রে হঠাৎই ভুল ধরা পড়ল—এ প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। তাঁর কথায়, “যে তালিকার ওপর ভর করে নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হলেন,অমিত শাহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হলেন এবং বিজেপি সরকার গঠন করল,সেটি যদি এখন ভুয়ো ভোটারে ভরা বলে প্রমাণিত হয়, তবে তাঁদের নির্বাচনও বৈধ নয়। প্রমাণ হলে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী-সহ জয়ী প্রার্থীদের ইস্তফা দিতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “বাংলার তালিকা ভুল কিন্তু গুজরাত বা উত্তরপ্রদেশের তালিকা ঠিক—এটা হতে পারে না। যদি বিশেষ নিবিড় সংশোধন করতেই হয়,তবে আগে লোকসভা ভেঙে দিন,সারা দেশে একসঙ্গে সংশোধন হোক। আমি নিজেও প্রয়োজনে সাংসদ পদ ছাড়তে রাজি।”

অভিষেকের অভিযোগ, কর্নাটকে ডুপ্লিকেট ভোটারের নাম পাওয়া গিয়েছে—একই ভোটারের নাম চার জায়গায় রয়েছে,বহু ঠিকানা ভুয়ো। মহারাষ্ট্রে আবার লোকসভা ভোটের মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যে ৪০ লক্ষ নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছে এবং তার পরেই বিজেপি জয়ী হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, “ভোটার তালিকা নিয়ে বিজেপি কারচুপি করছে, আর নির্বাচন কমিশন তা দেখেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।”

এই বিষয়ে শুধু তৃণমূল নয়, কংগ্রেস, সিপিএম, সমাজবাদী পার্টি, ডিএমকে, উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা, আরজেডি-সহ বিরোধী জোটের প্রায় সব দলই বিশেষ নিবিড় সংশোধনের বিরোধিতা করছে। মঙ্গলবার প্রায় ৩০০ বিরোধী সাংসদ সংসদ ভবন থেকে নির্বাচন কমিশনের দফতরে মিছিল করে যান এবং কমিশন ভবন ঘেরাও করেন।

বুধবার কলকাতা বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অভিষেক অভিযোগ করেন, “গতকাল সাংসদদের যেভাবে আটকানো হয়েছে, তাতে স্পষ্ট কমিশন ভয় পেয়েছে। শান্তিপূর্ণ মিছিল আটকাতে ব্যারিকেড বসিয়ে ধাক্কাধাক্কি করা হয়েছে। মহিলা সাংসদদেরও টেনে হিচড়ে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমাদের সাংসদ মিতালি বাগ অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন।”

তিনি আরও জানান, “একই EPIC নম্বরে একাধিক ভোটারের নাম রয়েছে—এ তথ্য রাজনৈতিক দলের নয়, নির্বাচন কমিশনেরই। যদি প্রাক্তন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের আমলে তালিকা বিকৃত হয়ে থাকে, তবে তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হওয়া উচিত। আর সেই তালিকার ভিত্তিতে জয়ী সকলকেই ইস্তফা দিতে হবে।”

হুঁশিয়ারি দিয়ে অভিষেক বলেন, “এ তো সবে শুরু। এবার এক লক্ষ মানুষকে নিয়ে নির্বাচন কমিশনের দফতর ঘেরাও করব। মানুষের সামনে এই কারচুপি প্রকাশ করব।”

তৃণমূলের অবস্থান স্পষ্ট শুধু বাংলার জন্য আলাদা নিয়ম চাপানোর যে প্রচেষ্টা চলছে, তার বিরুদ্ধে তারা সর্বাত্মক লড়াইয়ে নামতে প্রস্তুত। নির্বাচনী মরশুমের আগে এই ইস্যুতে কেন্দ্র-বিরোধী সংঘাত আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

Share with

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *