২৬-র লড়াইয়ে তৃণমূলের মূল হাতিয়ার ‘ভাষা আন্দোলন’
মমতার নজরে হিন্দু বাঙালি ভোট
নিজস্ব প্রতিবেদক,মানুষের মতামত:২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ঢাকে কাঠি পড়ে গেল তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে। আর এই লড়াইয়ের অন্যতম মূল হাতিয়ার হতে চলেছে বাংলা ভাষা। সোমবার বোলপুরে এক বর্ণাঢ্য মিছিলের মধ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুরু করলেন ‘ভাষা আন্দোলন’-এর আনুষ্ঠানিক সূচনা। তাঁর দাবি, বাংলা ভাষার উপর লাগাতার আক্রমণ চালাচ্ছে বিজেপি। তাই রাজ্যের মানুষের স্বাভিমান রক্ষায় ভাষার প্রশ্নেই এবার ময়দানে নামছে তৃণমূল।
“বাংলা ভাষা মানেই বাংলাদেশি” অপবাদ — এই বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে জবাব চাই বলে দাবি করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । বোলপুরের মিছিল থেকে মমতা বলেন, “বাংলা ভাষা বললেই আজকাল কিছু বিজেপি শাসিত রাজ্যে মানুষকে বাংলাদেশি বলে অপবাদ দেওয়া হচ্ছে। এটা বাংলার অপমান। এটা ভারতের সংবিধানের অপমান। এই অপমানের জবাব রাজ্যের মানুষ ২০২৬ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে দেবেন।”
মুখ্যমন্ত্রী আগেই ঘোষণা করেছেন, আগামী দিনে প্রতি শনিবার ও রবিবার রাজ্যের প্রতিটি ব্লকে বাংলা ভাষার সমর্থনে তৃণমূল কংগ্রেস মিছিল করবে। এই কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেবেন স্থানীয় বিধায়ক, জেলা নেতৃত্ব ও পঞ্চায়েত প্রতিনিধি। কর্মসূচির মূল বার্তা— “আমার ভাষা, আমার গর্ব”।
২০২১ সালের পুনরাবৃত্তি?
রাজনৈতিক মহলের মতে, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের অন্যতম বড় “ন্যারেটিভ” ছিল ‘বহিরাগত’ বনাম ‘বাংলা নিজের মেয়েকে চায় ’। সেই লাইনেই এবার আরেক ধাপ এগিয়ে ভাষার ভিত্তিতে বিজেপিকে ঘেরার কৌশল নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল মনে করছে, হিন্দি হেজেমনি প্রতিষ্ঠা করতে বিজেপি বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির অবমূল্যায়ন করছে— এই বার্তাটিকে আরও তীব্র করে তোলা হবে।
তৃণমূলের এক রাজ্যস্তরের নেতা জানিয়েছেন, “বিজেপি সরকার হিন্দিকে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এনআরসি, এনপিআর-র নাম করে বাংলাভাষীদের উপর নজরদারি চলছে। তাই এবার মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে ভাষার মর্যাদা রক্ষা করাই আমাদের মূল রাজনৈতিক বার্তা।”
বিজেপির পাল্টা কটাক্ষ
তৃণমূলের এই কর্মসূচিকে ‘ভাষার নামে বিভাজনের রাজনীতি’ বলে কটাক্ষ করেছে রাজ্য বিজেপি। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “বাংলা ভাষা নিয়ে বিজেপির কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু ভাষার নামে বাংলার মানুষকে ভুল বোঝানো হচ্ছে। তৃণমূল ব্যর্থতা ঢাকতেই এখন ভাষাকে সামনে আনছে।”
বিশ্লেষকদের চোখে
রাজনৈতিক বিশ্লেষক দীপ্তিমান বসুর মতে, “ভাষা হল এক প্রবল আবেগ। মমতা সেই আবেগকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছেন। একদিকে বিজেপির হিন্দি কেন্দ্রিক রাজনৈতিক বার্তা, অন্যদিকে বাংলার আঞ্চলিক পরিচয়— এই দ্বন্দ্বে আবারও মেরুকরণ তৈরি করার চেষ্টা চলছে।” তবে তিনি সতর্ক করে দেন, “শুধু আবেগ দিয়ে ভোট টানা যাবে না। মানুষের কাছে উন্নয়নের বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে না পারলে ভাষা আন্দোলনের প্রভাব সীমিত হতে পারে।”
২০২৬ সালের ভোট যুদ্ধে তৃণমূলের প্রধান অস্ত্র বাংলা ভাষা— এটা এখন স্পষ্ট। “আমার ভাষা, আমার অধিকার” স্লোগান তুলে রাজ্যজুড়ে এক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করে ফেলেছে তৃণমূল। বিজেপি হিন্দি ভাষাভাষীদের প্রতিনিধি— এমন একটি মনোভাব মানুষের মধ্যে ছড়াতে চাইছে তৃণমূল নেতৃত্ব। এবার দেখার, এই ভাষা আবেগ কতটা কার্যকর হয় বাংলার রাজনৈতিক সমীকরণে।q